দেশের পশ্চিমপ্রান্তে রাজস্থানের সিকার লোকসভা কেন্দ্র থেকে কৃষক নেতা আমরা রাম জয় পেলেন সিপিআইএমের টিকিটে৷ কিন্তু বাংলার জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত থেকে গেল সিপিআইএম। একটি কেন্দ্র বাদ দিয়ে প্রতি ক্ষেত্রেই তৃতীয় স্থানে এসে ঠেকেছে সিপিএমের ভোট শেয়ার৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে সিপিআইএম একাই ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, (সংযুক্ত মোর্চা পেয়েছিল ২২.৫ শতাংশ ভোট) সেখানে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তাদের বরাতে জুটেছিল ৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট৷ সৃজন, প্রতীক উর, দীপ্সিতাদের মত তারকা প্রার্থী দিয়েও এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারল না আলিমুদ্দিন। প্রসঙ্গত, মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘গোটা দেশের হিসেবও মেলেনি, রাজ্যের হিসেবও মেলনি।’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন, ‘হারের কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। মোদী-বিরোধী হাওয়ায় রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে আস্থা রেখেছেন।’
সার্বিক ভাবে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বেছে নিয়েছেন তৃণমূলকে, বিশেষত দক্ষিণবঙ্গে৷ উত্তরবঙ্গের আসনগুলি নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হয় ভারতীয় জনতা পার্টি। বনগাঁ, রানাঘাট কেন্দ্রদুটিও গেরুয়া শিবিরের দখলে রাখে বাকি রাজ্যেও দ্বিতীয় স্থানে থেকে তারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজ্য রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন প্রকট হয়েছে গত দশ বছরের যাত্রাপথে। ধর্মীয় বিভাজনের কারণে বাস্তবেই কঠিন হয়েছে বামপন্থী রাজনীতির অনুশীলন। কিন্তু, কেবলমাত্র নির্বাচনী রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলে বামপন্থী আন্দোলনের ক্ষতি বই লাভ হয়না। তাই নির্বাচনের শেষে হতাশা নয়, সারা বছরই থাকতে হবে ময়দানে।
দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধীতার প্রেক্ষিত তৈরি হয়েছিল এবারের লোকসভা নির্বাচনে। সমাজবাদী পার্টি উত্তরপ্রদেশে ধর্মের রাজনীতির বিরুদ্ধেই জনগণের রুটিরুজির সমস্যা নিয়ে নির্বাচনে লড়েছিলেন। সাফল্যও পায় তারা৷ বিহারের আরা ও কারাকাট কেন্দ্রে বিজেপিকে হারিয়ে জয়লাভ করেছে সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। ফলে বামপন্থী রাজনীতির সম্ভাবনা সেই শেষ হয়ে যায়নি, তা বলার অপেক্ষা রাখে৷ প্রয়োজন মাঠে ময়দানে থেকে মানুষের মন বোঝা, তার নিত্যদিনের জীবন সংগ্রাম থেকে রাজনীতির উপাদান খোঁজা। 'মানুষ আমাদের বোঝেনি' কিংবা, 'বাংলা শিক্ষা চায় না, ভিক্ষা চায়'' এই বাক্যগুলি মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় লাল পতাকাকে। দুর্বল হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্ভাবনা।