লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে নিয়ে বেশ প্যাঁচে পড়েছে সিপিএম। কারণ লালপার্টির নেতারা এই প্রকল্পকে কখনও ‘উৎকোচ’, কখনও ভিক্ষা বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর সেটা যে ঠিক কাজ হয়নি তা পার্টির চিঠির পর এরিয়ে সম্মেলনে স্বীকার করে নেওয়া হল। রাজ্য সরকারের এই জনপ্রিয় প্রকল্পের জেরেই যে নির্বাচনে দলের কুপোকাত হয়েছে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিএম নেতারা। এমনকী খারাপ মন্তব্য করা যে ব্যুমেরাং হয়েছে সেটাও এরিয়া সম্মেলনে উঠে এসেছে। দলের এরিয়া স্তরের সম্মেলনের প্রতিবেদনে সর্বত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রকল্পের ‘প্রভাব’ উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে কোথাও ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’–এর কথা, আবার কোথাও সব প্রকল্পকে নিয়ে বলা হচ্ছে ‘মমতার জনমোহিনী প্রকল্প’। তার জন্যই মানুষের সমর্থন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে থেকে যাচ্ছে। গরিব মানুষের মধ্যে যে সমর্থন একদা বামেদের ছিল সেটা ফিরে না আসার নেপথ্যে রয়েছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’–সহ অন্যান্য প্রকল্প। যা কিনা কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্র এরিয়া স্তরের সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে থাকছে বলে সূত্রের খবর। এখানে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে। সেটা হল—মিটিং, মিছিলে যে পরিমাণ ভিড় করছেন মানুষজন, সেইসব বুথে নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তার থেকে কম ভোট পাচ্ছে সিপিএম প্রার্থী।
আরও পড়ুন: সদস্য সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে বঙ্গ–বিজেপি, ক্ষোভ উগরে দিলেন সুনীল বনসল
অন্যদিকে সিপিএম সূত্রে খবর, দলীয় রিপোর্টে ভোট পর্যালোচনার অংশে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’–সহ প্রকল্পগুলির উল্লেখ থাকছে। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক এরিয়া সম্মেলনের রিপোর্টে এমনও লেখা হয়েছে যে, ‘পার্টির মিছিলে আসা মহিলারাও বুথে গিয়ে আমাদের ভোট দিচ্ছেন কি না সন্দেহ আছে।’ এই বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘সিপিএম পার্টিতে সম্মেলনে সদস্যরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলে থাকেন। তৃণমূল কংগ্রেস সম্মেলনে যে কিছু প্রকল্প ভোটের হাতিয়ার করেছে সেটা সম্মেলনে উঠে এসেছে। গ্রামাঞ্চলে নাগরিককে প্রজা বানিয়ে রাখা হচ্ছে।’
এছাড়া ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ একাধিক রাজ্যে কার্যত মডেলে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে বিজেপি জোট এবং হেমন্ত সোরেনের জয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা নিয়েছে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মাসে নগদ অর্থের প্রকল্প। তার আগে কর্নাটক এবং তেলাঙ্গনার নির্বাচনে একই কৌশলে সুফল পেয়েছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিং চৌহানও হেঁটেছেন সেই পথেই। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা উড়িয়ে বিধানসভা ভোটে সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। আর সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘দেশে বিজেপির লুট চলছে। আর রাজ্যে তৃণমূলের। এখান থেকে মানুষকে মুক্ত করার লড়াই জারি রাখতে হবে।’