তিনি নিজের জীবনে বিলাসিতাকে কখনও স্থান দেননি। সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি। তাঁর যা পড়াশোনা বা মেধা তাতে বিরাট চাকরি করে আরামের জীবনযাপন করতে পারতেন। লুকিয়ে পড়ুয়াদের বই কিনে দিতেন ছাত্র অবস্থায়। তাঁর মা ভাবতেন ছেলে প্রেম করছে। নিজের বাড়িও ছেড়ে দিয়েছিলেন বহু যুগ আগেই। আর ফেরেননি। নিজের মাকে বলেছিলেন, ঘর বাঁধার জন্য ঘর ছাড়ছেন না তিনি। বরং মানুষের জন্য কাজ করতেই ঘর ছাড়ছেন। আজও যখন তাঁর জন্মদিন আসে তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মায়ের হাতের পায়েসের কথা মনে করে। হ্যাঁ, তিনি বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। যাঁর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। আর রাজ্য–রাজনীতিতে সেটা নিয়েই এখন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে বিমান বসুর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে যায়। আর সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি রেস্তোরাঁর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অশীতিপর সিপিএম নেতা। একটু পিছনের দিকে কয়েকটি টেবিলে অন্য অতিথিরা খাওয়াদাওয়া করছেন। (এই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটাল’)। এই ছবি দেখে মনে হচ্ছে, জাতীয় সড়কের ধারের কোনও রেস্তোরাঁ। খাবার খেয়েছেন সেখানে। বিমান বসুকে দেখে তেমনই মনে হচ্ছে। তাঁর এই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা লিখেছেন, ‘উৎসবে ফিরব না, শুধু রেস্তোরাঁয় খেতে যাব।’
এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর এই কাজের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসেরই নেতা কুণাল ঘোষ। তাই ছবি নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘বিমান বসুকে নিয়ে কাল রাত থেকে এই ছবি এবং বিভিন্ন মন্তব্যের পোস্ট ঘুরছে। সাধ্যমত আমি সেইগুলিতে একই বয়ানে আপত্তি জানিয়েছি। ভালো লাগল, আমার মন্তব্যের পর একাধিক ফেসবুকবন্ধু বিমানদাকে নিয়ে পোস্ট ডিলিট করেছেন। এই সুস্থতা ও সৌজন্য থাকুক। পরামর্শ মানার জন্য ধন্যবাদ।’ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে চরম সমালোচকও বিমান বসু সম্পর্কে এমন কথা মেনে নিতে রাজি নন।
আরও পড়ুন: শনিবার থেকে শুরু হয়ে যাবে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ছুটি, টানা ১৬ দিন বন্ধ নবান্ন
কিন্তু ছবি কেন ডিলিট করার পরামর্শ দিলেন কুণাল? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও কুণাল ঘোষ তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই বিষয়ে কুণাল লেখেন, ‘আমার মনে হয় দূরপাল্লার কোনও যাত্রার মাঝে এটা কোনও দোকান। নদিয়া জেলা হতে পারে। বিমানদা এখন কোনও রেস্তোরাঁয় খেতে যাবেন— এটা অসম্ভব। ছবিটা কবেকার তা অবশ্য জানি না। দূরের যাত্রা হলে মাঝপথে কোথাও বসাটা স্বাভাবিক।’ সূত্রের খবর, প্রয়াত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভা উপলক্ষ্যে শনিবার বহরমপুরে গিয়েছিলেন বিমান বসু। সড়কপথেই তিনি গিয়েছিলেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, এই পথে গেলে বিমান বসু কৃষ্ণনগরের রাস্তায় কোনও দোকানে চা খান। তার পর আবার রওনা দেন। সৌজন্য দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা বিমান বসুর ছবি নিয়ে পোস্ট ডিলিট করেছেন বলে কুণাল ঘোষ দাবি করেন।