ওরা আস্তিক নয়। বরং ওরা নাস্তিক। এই কথারই প্রচলন ছিল সিপিএমকে নিয়ে। কিন্তু এখন শুধু রাজ্যে নয়, গোটা দেশে মেরুকরণের রাজনীতি চলছে। ‘ধর্মীয় মেরুকরণ’। যে সিপিএম ধম্ম–কম্ম করত না, তারাও এখন সরাসরি ধর্মের দিকে না ঝুঁকলেও যাঁরা ধর্মের দিকে আছেন তাঁদের সঙ্গে মাখামাখি করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। অর্থাৎ ধর্মের সঙ্গে না জড়িয়েও ধর্ম ঘেঁষে থাকতে চাইছে সিপিএম। আসলে আরএসএস এবং বিজেপি যেভাবে ধর্মীয় রাজনীতির খেলায় মেতে উঠেছে সেটাকে মোকাবিলা করতেই এই বিকল্প পথ বেছে নিতে চাইছে সিপিএম।
সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনে এমন পদক্ষেপের কথাই বলেছে সিপিএম। হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে এখন বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কারাত লাইন। আরএসএস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক এবং সাংগঠনিকভাবে রুখে দাঁড়াতেই পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সিপিএম। তাই কিছু পদক্ষেপ করতে খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে ‘হিন্দুত্বের মোকাবিলা’ শীর্ষক অধ্যায়ের ২.৮০ অনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে: ‘ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজনের মধ্যে গিয়ে দলকে কাজ করতে হবে। ধর্মীয় বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার কখনই এক জিনিস নয় সেটা বোঝাতে হবে। উৎসব ও সামাজিক জমায়েতে যোগ দিতে হবে বেশি করে। যাতে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিতে না পারে’।
আরও পড়ুন: মহাকুম্ভে মহাবিশৃঙ্খলায় বাংলার নাগরিকদের পাশে নবান্ন, হেল্পলাইন নম্বর চালু করল রাজ্য
সিপিএম বরাবরই ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে, ধর্মাচরণ ব্যক্তিগত বিষয়। তা বলে উৎসবে, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কোনও অসুবিধা নেই। বাংলায় তাই ধর্মের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে না পড়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা উৎসবে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। তাতে একটা বার্তা যাবে— সিপিএম সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। সিপিএম সূত্রে খবর, আরএসএস এবং বিজেপির রাজনীতির সঙ্গে সিপিএমের যে পার্থক্য রয়েছে সেটা স্পষ্ট করে মানুষকে বোঝাতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী এপ্রিল মাসে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস হতে চলেছে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে। যাকে মন্দির শহর বলা হয়। সে রাজ্যে শক্তিও বাড়িয়েছে সিপিএম। বৃহত্তর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং বিজ্ঞান আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে হবে। যাতে ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী ধারণাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি যেভাবে ধর্মকে ঢাল করে এগোচ্ছে, তার মোকাবিলা করতে সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রচারকে জুড়তে হবে। এই বিষয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘ধর্ম এবং উৎসব নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিমূলক ধারণা আছে। তাই নিজেদের অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করা হচ্ছে।’ আর সর্বভারতীয় এবং রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলার লাইনই ঠিক করা হয়েছে। নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। সেটা মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক জোটে’ যেতে চাইছে না সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরোধিতার কথা উল্লেখ আছে প্রতিবেদনে।