ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবের পরে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশের জেলাগুলিতে এই প্রথম দেখা যাচ্ছে সামুদ্রিক পাখির ঝাঁক। পক্ষি বিশারদদের মতে, ১৫৫-১৬৫ বেগে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝাপটাতেই সমুদ্র ছেড়ে বাংলার মূল ভূখণ্ডের অনেক ভিতরে চলে এসেছে এই পাখিগুলি।
সম্প্রতি কলকাতা, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলায় সামুদ্রিক পাখিদের এই ঝাঁকের দেখা পেয়েছেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা এবং স্থানীয় পক্ষীপ্রেমীরা।
দেখতে পাওয়া গিয়েছে গ্রেটার, লেসার ও ক্রিসমাস ফ্রিগেটবার্ড-এর তিনটি প্রজাতি। এ ছাড়া উইলসন’স স্টর্ম পেট্রেল, সুটি টার্ন, লেসার ক্রেস্টেড টার্ন, গ্রেটার ক্রেস্টেড টার্ন, ব্রাউন নডি এবং শর্ট-টেইলড শিয়ারওয়াটার-এর মতো মূল ভূখণ্ডে বিরল প্রজাতির বেশ কিছু সামুদ্রিক পাখি।

জুলজিক্যাল সার্ভের পক্ষী বিজ্ঞানী জি মহেশ্বরণ জানিয়েছেন, ‘উপকূলবর্তী অঞ্চলে মিষ্টি জলের মাছ শিকার করতে আসা কয়েক প্রজাতির টার্ন দেখা যায়। কিন্তু ফ্রিগেটবার্ডের কোনও প্রজাতি বাংলার মূল ভূখণ্ডে নজরে পড়ে না। এদের মধ্যে বেশ কিছু পাখি ধকল ও অনাহারের জেরে মারা যেতে পারে। এখানে ওদের উপযোগী খাদ্যের অভাব রয়েছে। আমার কয়েক জন সহকর্মী ওদের ছবি তুলেছেন।’
তিনি জানিয়েছেন, ফ্রিগেটবার্ডরা শুধুমাত্র সাগরেই বেঁচে থাকে। সমুদ্রের গভীরে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে আনতে দক্ষ এই পাখিরা ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে প্রচুর পরিমাণে মারা গিয়েছে বা আহত হয়েছে। তাঁর দাবি, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা পরিযায়ী পাখিদের বার্ষিক অভিবাসনের সময় ঝড় এলে হতাহতের সংখ্যা আরও বহু পরিমাণে বাড়ত।
পশ্চিমবঙ্গের বার্ডওয়াচার সোসাইটির সম্পাদক সুজন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঝড় থেমে যাওয়ার পরে ধীরে ধীরে টার্ন ও শিয়ারওয়াটার প্রজাতির পাখিরা সমুদ্রে ফিরে গেলেও একাধিক জেলায় মানুষের তৈরি ফাঁদে ধরা পড়েছে ফ্রিগেটবার্ডরা। তাদের মধ্যে কিছু মারাত্মক অবস্থায় আহত পাখিকে উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা। এই বিষয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাঁরা রিপোর্ট তৈরি করছেন বলে জানিয়েছেন সুজনবাবু। তবে লকডাউনের কারণে কাজে বাধা পড়ছে বলেও তিনি আক্ষেপ করেছেন।

পক্ষীপ্রেমী সন্দীপ দাস জানিয়েছেন, এই প্রথম কলকাতার পূর্ব উপকণ্ঠের নিউ টাউনে ফ্রিগেটবার্জ দেখা গিয়েছে। বালি ব্রিজের কাছে এই প্রজাতির কিছু পাখির তিনি ছবি তুলতে পেরেছেন বলেও জানিয়েছেন। হুগলি জেলাতেও কিছু এই প্রজাতির পাখি দেখা গিয়েছে বলে দাবি সন্দীপের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাটানগরবাসী পক্ষীপ্রেমী স্বরূপ সাহা আমফান হানার পরের দিন গত ২১ মে সকালে স্থানীয় নদীর জেটিতে ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘বিভিন্ন প্রজাতির কয়েকশো টার্ন দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি। নদীর তীর ধরে ওরা হাঁটছিল। এ ছাড়া প্রায় ৩০০ নানান প্রজাতির মধ্যে কমপক্ষে ৩০টি রোসেট টার্ন দেখতে পেলাম।’

দমদমের পক্ষীপ্রেমী সন্দীপ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় অনেক দেখেছি, কিন্তু আমফান সকলের চেয়ে আলাদা। লাক্ষাদ্বীপ বা ভারতের পশ্চিম উপকূলে থাকা বহু প্রজাতির পাখি এই প্রথম বাংলায় দেখা গিয়েছে। আমার এক বন্ধু পক্ষীপ্রেমী এই কলকাতায় নদীর তীরে একটি উইলসন’স স্টর্ম পেট্রেল দেখতে পেয়েছেন। এই দৃশ্য কল্পনারও অতীত।’