গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপি–তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদেরকে দেখা গিয়েছিল রাজনৈতিক তরজায় কটূক্তি এবং প্রকাশ্যে একে অপরকে বেলাগাম কুৎসা করতে। কিন্তু ঠিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেখা যাচ্ছে অদ্ভূত পরিবর্তন। দু’পক্ষেরই প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠছে তথ্য–প্রমাণের দলিল। কে, কোন সময়ে কী বলেছেন এখন রাজনীতির ময়দানে তা উঠে আসছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসেবে। এটা এই প্রথম দেখা যাচ্ছে। এতদিন এই তথ্যের অস্ত্রে শান দিয়ে পরিসংখ্যান পেশ করতে দেখা যেত সিপিএমকে।
এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সিপিএম সেই তথ্য–পরিসংখ্যান সেখানে তাঁরা শেয়ার করছেন। তবে ক্ষমতায় থাকাকালীনও এই তথ্য–পরিসংখ্যান তাঁরা বিভিন্ন জনসভা থেকে পথসভায় তুলে ধরতেন। এখন এই ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস–বিজেপির মধ্যে। ফলে এই তথ্য–পরিসংখ্যান ব্যাপক আকারে জমা পড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে এখন চর্চা তুঙ্গে। তবে এখন ভিডিয়ো–স্টিল ছবি এবং আরও অনেক ধরনের তথ্য পরিসংখ্যান পেশ করছে এই দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্যের যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এই বিষয়ে এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘তথ্য যুদ্ধ তো দু’সপ্তাহ আগে থেকে শুরু হয়েছে। যখন অমিত মালব্যকে রাজ্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন অমিত শাহ এবং জেপি নাড্ডা।’ অমিত মালব্য বিজেপি’র আইটি সেলের প্রধান। তিনি দায়িত্ব এসেছেন রাজ্যের কো–ইনচার্জ হিসেবে। তারপর থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যেসব মন্তব্য অতীতে করেছিলেন, সেগুলি দিয়ে ভিডিয়ো বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হচ্ছে। আসলে পূর্ব প্রতিশ্রুতি মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানান ওই নেতা।
এই যুদ্ধে তৃণমূলও পিছিয়ে নেই। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির বিরুদ্ধে থাকা একাধিক পরিসংখ্যান শেয়ার করছে। একইসঙ্গে বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলন করা হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে। সেখানে বিজেপি’র তোলা অভিযোগের জবাব দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে একাধিক পরিসংখ্যান। এই বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতো নই। আমরা সমস্ত প্রশ্নের মুখোমুখি হই। প্রত্যেক বর্ষীয়ান সাংসদ এবং মন্ত্রী নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ২০ মিনিট কথা বলছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই কাজ চলবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত।’
স্বচ্ছ ভারত থেকে আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করা হচ্ছে তথ্য দিয়ে। আর স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করা হচ্ছে তৃণমূলকে। এছাড়া টুইট যুদ্ধে উঠে আসছে ‘ভাইপো’ প্রসঙ্গ। আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'পিসি' বলা হচ্ছে। আর বিজেপি ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে সরগরম রাখা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াকে।