কলকাতা শহরের বুক থেকে 'ট্রাম উঠে যাচ্ছে না'! অবাক হলেন? ভাবছেন, হঠাৎ করে সরকারি বা প্রসাশনিকস্তরে কোনও সিদ্ধান্তবদল হল কিনা? আজ্ঞে না। তেমন কিছুই ঘটেনি। কিন্তু, ট্রাম যে আদতে 'উঠে যাচ্ছে না', সেই দাবি করেছেন রাজ্যের শাসকদলের যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য।
কেন এমন মন্তব্য করলেন তিনি? ফেসবুকে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দেবাংশু। আজ্ঞে হ্যাঁ। কলকাতার ট্রাম এবং তা উঠে যাওয়া নিয়ে বুধবার ফেসবুকে একটি আবেগঘন লেখা পোস্ট করেন এই তরুণ রাজনীতিক।
তিনি সকলকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন, 'ট্রাম না থাকা' তাঁর 'জন্যেও দুঃখের'। কিন্তু, তারপরই তিনি সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন, 'ট্রাম উঠে যাচ্ছে না'! কারণ, 'ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত সিম্বলিক রুটে একটি ট্রাম চলবে।'
দেবাংশুর পরামর্শ, 'যাদের নস্টালজিয়ার পথে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে হবে তারা এই রুটে গিয়ে চেপে আসতেই পারেন। এটা তোলা হচ্ছে না।'
প্রশ্ন হল, তাহলে যে 'ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত সিম্বলিক রুট' বাদে কলকাতার আর কোথাও ট্রাম চলবে না, সেটা কি ট্রাম তুলে দেওয়া নয়? দেবাংশু কী বলছেন? তাঁর যুক্তি, 'বাকি যেটা হচ্ছে সেটা তুলে দেওয়া নয়, রুট কমিয়ে দেওয়া।'
দেবাংশু আরও যা যা লিখেছেন, তার মোদ্দা কথা হল, 'দুর্ঘটনা এড়াতে, যানজট কমাতে এর আগেও বহুবার ছাঁটা হয়েছে ট্রামের রুট। আরও একবার ছাঁটা হল।'
দেবাাংশু মনে করেন, বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই কালের নিয়মে একে একে স্টিম ইঞ্জিন, ঘোড়ায় টানা গাড়ি, দম দেওয়া ঘড়ি প্রভৃতি কমে গিয়েছে। 'সেভাবেই ট্রামকেও একদিন যেতে হত, বাস্তবতার প্রয়োজনে।'
দেবাংশুর এই ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট সেকশনে গেলে দেখা যাবে, সেখানে 'নানা মুনির নানা মত'। অনেকেই তৃণমূল যুবনেতাকে সমর্থন করে জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
কেউ কেউ আবার কলকাতার ট্রাম নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের নস্টালজিয়াকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। অনেকেই এই ট্রাম প্রীতির সঙ্গে বাম মানসিকতার তুলনা টেনে ঠাট্টা তামাশা করেছেন।
অনেকে আবার বলছেন, মানুষ যদি নিয়মিত ট্রাম ব্যবহার করত, তাহলে ট্রাম টিকে থাকত। কিছুটা একই যুক্তি ধরা পড়েছে দেবাংশুর লেখাতেও। তাঁর মতে, 'আপনি আমি যদি কথায় কথায় ওলা, উবের বুক না করে একটু ট্রামে চাপতাম, সরকারের খাতায় যদি যাত্রী সংখ্যার চাপ নথিভুক্ত থাকত, আমার বিশ্বাস এত সহজে রুটগুলো কমে আসত না।'
এর বিরুদ্ধ মতও অবশ্য রয়েছে। অনেকেই বলছেন, ট্রামের রুটসংখ্যা ধাপে ধাপে কমিয়ে না দিয়ে যুগোপযোগী আধুনিকীকরণ করা যেত। এই প্রসঙ্গে উন্নত দেশগুলির উদাহরণও টেনে এনেছেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, রোজকার যাতায়াতে ট্রামের দিন যে শেষ হচ্ছে, সরকারিভাবে সেই ঘোষণার পর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য, পোস্ট, কনটেন্ট চোখে পড়ছে। অধিকাংশ মানুষই এই সিদ্ধান্তে আহত হয়েছেন বলে মতপ্রকাশ করেছেন। রয়েছে বিরুদ্ধ মতামতও।
এবার একইভাবে ট্রাম নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করলেন শাসকদলে যুবনেতা দেবাংশু।