বছর খানেক আগের ঘটনা। কলকাতায় বিধানসভা চত্বরে বাবাসাহেব আম্বেদকরের একটি মূর্তি গঙ্গা জল দিয়ে ধুয়ে 'পবিত্র' করেছিলেন বিজেপি বিধায়করা। সেই কাজে তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।
তাঁর এবং তাঁর দলীয় সহকর্মীদের বক্তব্য ছিল, বাবাসাহেবের মূর্তির পাদদেশে বসে প্রতিবাদ দেখিয়ে সেই মূর্তি 'অপবিত্র' করেছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা!
এদিকে, যে বিক্ষোভ নিয়ে বিজেপি আপত্তি তুলেছিল, সেই কর্মসূচিতে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক মহিলা, আদিবাসী এবং জনজাতিভুক্ত বিধায়করাও সামিল হয়েছিলেন। ফলত, বিজেপির 'পবিত্রকরণ' কর্মসূচিকে সেই সময় তুলোধনা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের 'ন্যারেটিভ' ছিল - গঙ্গা জল দিয়ে মূর্তি ধুয়ে বিজেপি আসলে তৃণমূলের মহিলা, আদিবাসী ও জনজাতি বিধায়কদেরই অপমান করেছে। আগাগোড়া যাঁদের রক্ষা করার কথা বলে গিয়েছেন বাবাসাহেব স্বয়ং।
এবার আসা যাক বর্তমানে। মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে বাবাসাহেবকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন অমিত শাহ! তিনি বলেন, 'এটা একটা ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে। আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর...! যদি ভগবানের নাম এতবার নিতেন, তাহলে সাত জন্মের জন্য স্বর্গবাস হত!'
ইতিমধ্য়েই এই মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকী, তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন তো ঘটনার প্রতিবাদে অমিত শাহের বিরুদ্ধে 'প্রিভিলেশ নোটিশ' পর্যন্ত পেশ করেছেন। অন্যদিকে, সোশাল মিডিয়ায় তোপ দেগেছেন তাঁরই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
আর এবার এই ইস্যুতে সোচ্চার হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের তরুণ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। বুধবার এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরই পোস্ট করেন দেবাংশু। তবে, তিনি শুধুমাত্র অমিত শাহ বা বিজেপিকে নিশানা করেই ক্ষান্ত হননি। বরং, এক বছর আগের বিধানসভার ঘটনা টেনে এনে তোপ দেগেছেন শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধেও।

তিনি বলেছেন, '...আমরা দেখেছি, কীভাবে ড. বি আর আম্বেদকরের মূর্তি গঙ্গা জল দিয়ে ধুয়ে (আদিবাসীদের) অপমান করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।'
দেবাংশুর তোপ, বিজেপি আসলে সবকিছুই 'জাতপাতের চশমা'র ভিতর দিয়ে দেখে! সেই কারণেই অমিত শাহ বাবাসাহেব সম্পর্কে অমাননাকর মন্তব্য করতে পারেন। যা আদতে বিজেপির আসল চেহারা সামনে এনে দিয়েছে বলেই মনে করেন দেবাংশু।
তাঁর মতে, বিজেপি আসলে ধর্মান্ধ এবং পশ্চাদপদ ভাবধারা দ্বারা পরিচালিত হওয়া একটি রাজনৈতিক দল। তারা আমাদের সংবিধানের মহান আদর্শগুলির প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যই নয়।
দেবাংশুর মতে, এই ধরনের আচরণ বাবাসাহেবের ঐতিহ্য কলুষিত করছে। এবং বিজেপির গভীরে যে পিছিয়ে পড়া, দুর্বল জনগোষ্ঠীগুলিকে দমনের মানসিকতা রয়ে গিয়েছে, তাকেই প্রকাশ্য়ে এনে দিচ্ছে। খানিকটা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সুরেই তিনি বলেছেন, বিজেপির ভণ্ডামির মুখোশ খুলে গিয়েছে!
সবশেষে গোটা ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা দাবি করেছেন দেবাংশু।