কোনও প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হলে এবং বিয়ে করে বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে না চাইলে তাঁকে বাধা দেওয়া যায় না। সোমবার এক মামলার শুনানিতে এমনই মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্ট।
ওই মামলায় নদিয়ার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর চুয়াল্লিশের এক কৃষিজীবী অভিযোগ করেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর দোকানে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তাঁর মেয়ে। পরের দিন জানা যায়, তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে এক মুসলিম যুবককে বিয়ে করেছেন। মেয়ের বাবার দাবি, জোর করে বা ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর মেয়েকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে ও বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়েছে।
মেয়ের পরিণতির কথা জানতে পেরে মুরুটিয়া থানায় ওই মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী কৃষক।
তাঁর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে যদি ১৯৫৪ সালের স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করতেন, তা হলে তাঁর আপত্তি থাকত না। কিন্তু বিয়ে করার জন্য ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণেই তাঁর সন্দেহ দেখা দিয়েছে বলে জানান আইনজীবী।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ মেয়েকে খুঁজে বের করলে দায়রা বিচারকের সামনে তরুণী বয়ান দেন যে, তিনি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছেন ও নিজের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করেছেন।
তা সত্ত্বেও অস্বস্তিকর আবহে তাঁর মেয়ের বয়ান নেওয়া হতে পারে অভিযোগ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তরুণীর বাবা।
অভিযোগ পেয়ে বছর উনিশের তরুণীকে হাই কোর্ট শীর্ষস্থানীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারকের কাছে ফের বয়ান নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়। বয়ান নথিভুক্ত করার সময় যাতে অনুকূল পরিবেশ থাকে, সে বিষয়েও সতর্ক করে আদালত। বয়ান নথিভুক্ত হলে তা হাই কোর্টে জমা দেন জেলা বিচারক। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হননি মামলাকারী কৃষিজীবী।
সোমবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ‘যদি কোনও প্রাপ্তবয়স্ক নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেন ও ধর্ম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজের বাবা-মায়ের কাছে ফিরতে অস্বীকার করেন, তা হলে এই বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।’
একই সঙ্গে ওই তরুণীকে বুধবার সকাল ১০.৩০ সময় হাই কোর্টের অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবীর চেম্বারে একা দেখা করার নির্দেশ দেয় আদালত। এ দিন, বুধবার আদালতের নির্দেশ যথাযথ পালন করেছেন তরুণী।