বন্ধু, কমরেড। সামনে নিথর দেহ। চির বিদায়ের পথে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিমান বসু। কষ্ট হচ্ছে। গলার কাছে হয়তো দলা পাকানো একটা ব্যাথা বেরিয়ে আসত চাইছে। তবে তিনি বিমান বসু। এই পার্টির নানা উত্থান পতনের সাক্ষী তিনি। বন্ধুর নিথর দেহ সামনে। বিমান বসু বলেন, বসা অবস্থা থেকে উঠতে কষ্ট হচ্ছিল। আমার বন্ধু চলে গেল। কথা বলার অবস্থায় নেই। প্লিজ কিছু বলতে চাই না! তার মধ্য়েই সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ভিজতে বারণ করেন বিমান বসু। তিনি এমনটাই। কাঠ কাঠ কথা বলেন। কিন্তু বন্ধু বিয়োগে বেশ আবেগপ্রবণ বিমান বসু। আর কথা বলতে চাননি তিনি।
সাত তরুণ। সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত প্রমোদ দাশগুপ্ত যে সাত তরুণকে নেতৃত্বে তুলে এনেছিলেন তাদের মধ্য়ে অন্যতম হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার মধ্য়ে অন্যতম হলেন বিমান বসু।
তবে চলে গেলেন বুদ্ধদেব। আরও কি একলা হয়ে গেলেন বিমান বসু?
সাত নেতা। অনিল বিশ্বাস, শঙ্কর গুপ্ত, দীনেশ মজুমদার, শ্য়ামল চক্রবর্তী, সুভাষ চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বিমান বসু। এই সাতজনের মধ্য়ে ৬জন আর ইহজগতে নেই। কেউ চলে গিয়েছেন অনেকটা আগেই। কেউ আবার কিছুটা পরে। দল মনে রেখেছে তাঁদের অবদানকে। কমিউনিস্ট আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আজীবন প্রাণপাত করে গিয়েছেন তাঁরা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১১ বছর মুখ্য়মন্ত্রী ছিলেন। তবে বিমান বসু কোনও দিন ভোটের রাজনীতিতে আসেননি। দিনের পর দিন পার্টির কাজ করে গিয়েছেন।
আজীবন বন্ধু ছিলেন বিমান ও বুদ্ধদেব। মতবিরোধ যে ছিল না তা নয়। চলার পথে নানা সময় মতবিরোধ ছিল দুজনের মধ্য়ে। তবে সবটাই ছিল দলের অন্দরে। তবে সেই সঙ্গেই উভয়ের মধ্য়ে বন্ধুত্বও ছিল প্রবল। একজন ভোটের রাজনীতির অলিগলিতে ঘুরতেন। আর অপরজন সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার চলে গেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাম অ্য়াভিনিউয়ের ছোট্ট ঘরটা আরও শূন্য হয়ে গেল। বাংলা হারাল এক আবেগপ্রবণ সৎ রাজনীতিবিদকে।
সেই সঙ্গেই বাংলায় শূন্য সিপিএমকে রেখে গেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর আমলেই বাংলা থেকে বিদায় নিয়েছিল সিপিএম। তাঁর আমলেই ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়েছিল সিপিএম। সেই সিপিএম আজ আরও ক্ষয়িষ্ণু। তবে বাংলা মনে রাখবে এক সৎ রাজনীতিবিদকে। আর বিমান বসু মনে রাখবেন এক প্রিয় বন্ধুকে। যে বন্ধু একলা করে চলে গেলেন আগেই।