স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
আকাশছোঁয়া ওষুধ ও টেস্টের দামের দরুণ বেহাল অবস্থা আম আদমির। আগের থেকে বেড়েছে হাসপাতালের চার্জ, খরচ বেড়েছে যাতায়াতের। তার মধ্যেই তাক লাগাল কলকাতার এক হাসপাতাল। মাত্র ৫০ টাকায় কিডনির রোগে ভোগা পেশেন্টদের ডায়ালিসিস করে দিচ্ছে তারা।
মধ্য কলকাতার ধর্মতলা অঞ্চলে অবস্থিত কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প এই সুযোগ দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রথমে ৩৫০ টাকা চার্জ নেওয়া হত ডায়ালিসিস করতে। সেটাও অন্য হাসপাতালে যা টাকা নেয়, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। কিন্তু তারপরে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে লকডাউনের বাজারে হাসপাতালে আসতেই পেশেন্ট পার্টির অনেক খরচা হচ্ছে। তাই ডায়ালিসিসের দাম কমিয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে।
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আবদুল হালিমের ছেলে ফুয়াদ হালিম এই হাসপাতাল চালান। তিনিই বললেন এত সস্তায় পরিষেবা দিতে পারার ফর্মুলাটি। কম খরচা যাতে হয়, তারজন্য যাবতীয় বাহুল্য যেগুলি অন্য নার্সিং হোমে থাকে, সেগুলি এখানে নেই। কোনও এসি নেই, লিফট নেই। এমনকী রিসেপশন ও ওয়েটিং এরিয়াও নেই রোগীর পরিবারের বসার জন্য। তিনজন চিকিত্সক আছেন, তার মধ্যে স্টাইপেন্ড নেন একজনই। ফুুয়াদ ও আরেকজন বিনাপয়সায় চিকিত্সা করেন। এই ভাবেই ৩৫০ টাকায় ডায়ালিসিস করান তিনি।
মহম্মদ ইশাক রোডে ফুয়াদ হালিমের বাড়ির লাগোয়াই এই পাঁচ শয্যার হাসপাতাল। আছে নটি ডায়েলিসিস মেশিন। ফুয়াদ হালিম বলেন যে লকডাউনের দুই মাসে যারা হাসপাতালে আসেন, সেই রোগীদের আর্থ সামাজিক বিন্যাসেও কিছুটা পরিবর্তন তিনি দেখেছেন। আগে শুধুই গরীব মানুষ আসতেন, কিন্তু ধীরে ধীরে নিম্ন মধ্যবিত্তরাও আসছেন হাসপাতালে। মার্চ ২৬ থেকে মে ২৮-এর মধ্যে ১৫৭১টি ডায়ালিসিস হয়েছে এই হাসপাতালে। এর জন্য মাত্র ৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।
সিপিআইএমের অন্যতম তরুণ মুখ ফুয়াদ হালিম। কিন্তু এখনও নির্বাচনী রাজনীতিতে তেমন দাঁত ফোটাতে পারেননি তিনি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার থেকে লড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে ছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন যে তিনি একটি বড় বাজারে সেলসম্যানের কাজ করতেন। আগে তিনি নামজাদা হাসপাতালে যেতেন, যেখানে করোনার জেরে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই মাস মাইনে পাননি এই ব্যক্তি, তাই সেই হাসপাতালে যাওয়ার কোনও উপায় নেই তাঁর।
পার্ক সার্কাসের নিবাসী মির্জা হাসানের কাকার ডায়ালিসিস হয়েছে কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প হাসপাতালে। তিনি বলেন যে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার তাদের উপায় ছিল না যাতায়াতের খরচ ও হাসপাতালের চার্জ বেড়ে যাওয়ায়। সেখানে আশার কিরণ হিসাবে এসেছে ফুয়াদ হালিমের এই হাসপাতাল।
ডায়ালিসিস হতে চার ঘণ্টা লাগে। সেই সময় আশেপাশে অপেক্ষা করেন রোগীর বাড়ির লোকেরা। বেসরকারি নার্সিংহোমে প্রায় ১২০০-১৫০০ টাকা লাগে ডায়ালিসিস করতে তবে লকডাউনের সময় দাম বেড়ে দুই হাজারের ওপর হয়ে গিয়েছে।
এক বেসরকারি হাসপাতালের মালিক জানান যে স্যানিটাইজ করা, পিপিই জোগাড় করা ও মাস্কের ব্যবস্থা করার জন্য দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।