রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বা টেট দুর্নীতিতে নাম জড়ানোর পর এবার সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে মুখ খুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই তথা প্রাক্তন সাংসদ এবং বর্তমানে বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু অধিকারী।
আর এ নিয়ে মুখ খুলেই সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে 'অতীত' বলে উল্লেখ করলেন দিব্য়েন্দু। সংবাদমাধ্যমকে সরাসরি বললেন, তারা যেন আর 'এই চ্যাপটার নিয়ে বেশি জলঘোলা' না করে! এমনকী, নাম না করে নিশানা করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কেও। জোর গলায় জানালেন, দোষ প্রমাণ হলে আইন অনুসারে যা শাস্তি দেওয়া হবে, তা মাথা পেতে নেবেন তিনি।
উল্লেখ্য, টেট দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে একটি নথি এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তাতে নাকি এমন ৩২৪ জন অযোগ্য চাকরি প্রাপকের নাম রয়েছে, যাঁরা প্রভাবশালীদের সাহায্যে চাকরি হাসিল করেছিলেন! অভিযোগ, এই ৩২৪ জনের মধ্যে ১১ জনের চাকরির সুপারিশ করেছিলেন দিব্যেন্দু!
রবিবার এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে দিব্যেন্দু জানান, এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। কারণ, এই ঘটনায় উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাই, যা বলার, সেটা ওই সংস্থাই বলবে।
এরপর দিব্যেন্দুকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়কে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। কেন এমনটা করেছিলেন?
জবাবে দিব্যেন্দু জানান, 'ব্যক্তি জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় একটি জিনিস লিখেছিলেন। যেটা আমার মনে হয়েছে, আমার জন্য সম্মানহানিকর। তাই, আমি আমার আইনজীবী তাঁকে নোটিশ পাঠাই। তাঁর শুভ বুদ্ধির উদয় হয় এবং তিনি দু'ঘণ্টার মধ্যেই ওই পোস্ট তুলে নেন।'
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্য়াকাউন্টে সিবিআই-এর হাতে আসা সংশ্লিষ্ট তালিকাটি পোস্ট করেছিলেন। যাতে দিব্যেন্দু-সহ একাধিক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর নাম ছিল - যাঁরা নাকি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অযোগ্য ব্যক্তিদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু, দিব্যেন্দুর আইনজীবী এই পোস্ট নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নোটিশ পাঠানোর পরই সেই পোস্টটি জগন্নাথের প্রোফাইল থেকে উধাও হয়ে যায়।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই একটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেন দিব্যেন্দু। তিনি জানান, 'গতকালই (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) আমার সঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি মাননীয় ড. সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাই, আপনারা (সংবাদমাধ্যম) আর এই চ্যাপটার নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করবেন না!'
একইসঙ্গে, দিব্যেন্দু জানান - তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির কোনও অভিযোগ যদি সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ভারতের সংবিধান এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) অনুসারে তাঁকে যা শাস্তি দেওয়া হবে, তিনি তা মাথা পেতে নেবেন।
এই প্রসঙ্গে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'দিব্যেন্দু অধিকারী অত বোকা নয়, যে বলবে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ব!'
প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে বহুবার 'গলা দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া' বা 'ফাঁসিকাঠে ঝুলে পড়া' সংক্রান্ত মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, এক্ষেত্রে দিব্যেন্দু আসলে নাম না করে অভিষেককেই কটাক্ষ করেছেন।