গড়িয়াহাট। কোনটা দোকান আর ফুটপাত বোঝা যায় না। মূল দোকান ঘেঁষে সারি সারি স্টল। আবার রাস্তার রেলিংয়ের ধারে একের পর এক স্টল। আর এখানেই রয়েছে বিশেষ এক সমীকরণ। অর্থাৎ দোকানের কোল ঘেঁষে যারা রয়েছেন তারা মূলত আদি হকার। অর্থাৎ তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ওখানে রয়েছেন। আবার রেলিংয়ের ধার ঘেঁষে যাদের দোকান তারা মূলত কম দিন ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন। কিন্তু একটু ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে আসলে ওই নব্য হকাররাই মূলত দাপটের সঙ্গে ব্যবসাটা করেন। আর আদিরা কিছুটা হলেও কোণঠাসা।
কিন্তু রুটি রুজির সমস্য়া যেখানে সেখানে এই আদি নব্য, নবীন প্রবীণ দ্বন্দ্ব করে আর লাভ কি! কার্যত রোদ ঝড় জল বৃষ্টিতে এই আদি আর নব্য হকাররাই দিনের পর দিন ধরে ব্যবসা করছেন। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা আছে। ব্যবসায় ওঠানামা আছে। কার কাছে খদ্দের যাবে তা নিয়ে পারস্পরিক রেষারেষিও আছে। কিন্তু উচ্ছেদের খাঁড়া যখন সবার মাথার উপর ঝুলছে তখন তাদের একটাই আবেদন এভাবে উচ্ছেদ করে দিলে খাব কী ? যাব কোথায়?
আর কয়েক মাস পরেই পুজো। তার আগে থেকে গমগম করবে গড়িয়াহাট। পা ফেলার জায়গা মিলবে না। কার্যত গোটা ফুটপাতটাই আস্ত বাজার। সেখানে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। পথচারীরা কিছু বলতে গেলেই একেবারে রে রে করে ওঠেন এই হকারদের একাংশই। সেক্ষেত্রে কেন তাঁরা পথচারীদের জন্য একটু জায়গা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করেন না সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সব মিলিয়ে কলকাতায় হকার সমস্যা মেটানো যে এককথায় কঠিন তা মানছেন অনেকেই। বাম আমলে হয়েছিল অপারেশন সানসাইন। সেই অভিজ্ঞতা এখনও মনে আছে গড়িয়াহাটের হকারদের একাংশের। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। অনেক ভাঙা গড়ার খেলা। কিন্তু তবু গড়িয়াহাট আছে গড়িয়াহাটেই। তবে এতসব কিছুর পরেও অনেকেই এখনও ভরসা করছেন সেই ‘দিদি’কেই।
তবে সর্বত্রই একটা সমস্যা থেকেই গিয়েছে। গড়িয়াহাটের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে একাধিক দোকানের সামনের অংশ জুড়ে হকারদের দাপট। মূলত সেই দোকানের সামনের অংশটাই চাপা পড়ে গিয়েছে। হকারদের এই দাপটে শুধু পথচারীরাই নন, সাধারণ দোকানদারও মহা সমস্যায় পড়েছেন।
তবে এসবের মধ্যেই হকার উচ্ছেদ নিয়ে কিছুটা হলেও নরম সুর মুখ্য়মন্ত্রীর। তিনি ইতিমধ্য়েই জানিয়েছেন, এখনই উচ্ছেদের পথে না গিয়ে এক মাসের মধ্যে আমাদের সব কাজ সেরে ফেলতে হবে। হকাররা এক মাস সময় নিয়েছেন। তাঁদের সেই সময় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই এক মাসের মধ্যে নতুন কোনও হকার বসার অনুমতি দেওয়া যাবে না।