ইয়াসের ক্ষতিপূরণ ও ত্রাণ বণ্টনের রাশ নিজের হাতেই রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে টানা প্রায় দু’দিন নিজে কন্ট্রোলরুমে থেকে ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা বুঝে নিয়েছেন তিনি। এরপর জানিয়ে দিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই গোটা রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব হাতে চলে আসবে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস–এর জেরে ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক হিসেব। এবার হবে ফিল্ড সার্ভে। তাতেই উঠে আসবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত হিসেব বলে নবান্নে বৃহস্পতিবার জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নেওয়ার জন্য ৩ জুন থেকে দুয়ারে ত্রাণ কর্মসূচি চালু করা হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই দুয়ারে রেশন প্রকল্প শুরু হয়ে গিয়েছে। দুয়ারে সরকার, তারপর দুয়ারে রেশন–এর আদলে এবার ‘দুয়ারে ত্রাণ’ বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে থেকে সরাসরি ক্ষতির খতিয়ান নেবেন সরকারি অফিসাররা। ক্ষতিপূরণের টাকা যাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
কীভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে? এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘আগামী ৩ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ‘দুয়ারে ত্রাণ’ শিবিরে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন নেওয়া হবে। এবার আর কারও মাধ্যমে নয়, যিনি ক্ষতিগ্রস্ত, তিনি সরাসরিই আবেদন করবেন। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে ততটুকুই বলবেন। ১৯ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সেই আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হবে। তারপর ১ থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই টাকা পেয়ে যাবেন।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কারও কথায় ত্রাণ বন্টন হবে না। দুয়ারে সরকার–এর সময়ে সরকারি অফিসাররা এলাকায় গিয়েছিলেন সেভাবে এবারও যাবেন। যার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে তিনি একটি আবেদনপত্র লিখে অ্যাপ্লিকেশন বক্সে ফেলে দিয়ে আসবেন। আবার হাতেও দিতে পারেন।
এদিনই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের থেকে ক্ষতির খতিয়ান নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১.১৬ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমির ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০০ কোটি টাকা। স্থানীয় স্তরে বিভিন্ন জায়গায় টর্নেডোর কারণেও প্রচুর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, ভেঙে গিয়েছে একাধিক কাঁচাবাড়ি। তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ মিলবে বলে এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, যাদের চাষের জমি বা ফসলের ক্ষতি বা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে তারা ক্ষতিপূরণের আবেদন করবেন। নিজের আবেদন নিজেই করুন। ফলে কেউ বলতে পারবে না, কেউ আমার জন্য করল না। ওইসব আবেদন খতিয়ে দেখা হবে।
ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। আপাতত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই টাকা যাতে ঠিকমতো খরচ করা হয়, তা নিয়ে কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেও তিনি রাজ্যের ক্ষতিপূরণ নিয়ে সওয়াল করবেন বলেই খবর।