একদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পুজোমণ্ডপের ভেতরে ঢোকা নিষেধ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। অন্যদিকে দোসর বৃষ্টি মহাসপ্তমীতে ভাটার টান নিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে জনস্রোতহীন রাজপথ দেখল কল্লোলিনী কলকাতা। এমন নজির আগে কখনও দেখেছিল কিনা তা অনেকেই মনে করতে পারছেন না। বাগবাজারের মণ্ডপের সামনে হাতে গোনা ক’জন তরুণ–তরুণীকে বাদ দিলে চেনা ভিড় উধাও। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে মণ্ডপ থেকে ১০ মিটার দূরে নো–এন্ট্রি ব্যারিকেড। তার বাইরে থেকেই কয়েকজন সাবেকি প্রতিমা মোবাইলবন্দি করতে ব্যস্ত। দক্ষিণে দেশপ্রিয় পার্কে আবার মাঠের বাইরের দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে মণ্ডপ দেখার চেষ্টা।
কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্রে খবর, শেষ রাতে জনস্রোত বলে কিছু ছিল না। ট্র্যাফিক এতটাই কম ছিল যে কাউকে সেভাবে সামলাতে হয়নি। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় ছিল না। করোনার নিউ নর্মালে অভ্যস্ত মহানগরীর পুলিশ বাহিনীতেও তার ছোঁয়া লাগল। পুজোয় ভিড় সামলাতে ফি বছর যে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়, এ বার তাঁদের চাপ অনেকখানি কম। ভিড় কমায় বড় মণ্ডপগুলির সামনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হলেও কেউ পুজো সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছেন না, হচ্ছে না অঞ্জলিও। বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবের দিনগুলি আর হেঁটে নয় এই বছর সকলকে নেটেই কাটাতে হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশমতো কেউ মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারছেন না এবং শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে পুজোর সব কাজ করতে হচ্ছে। হাইকোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়ে এবার পুজোর উদ্যোক্তারাও সব কিছু করছেন। উত্তর কলকাতার অন্যতম বারোয়ারি পুজো কাশীবোস লেন সর্বজনীন পুজো কমিটি জানিয়েছে, এই বছর তাঁদের থিম ‘দেবীঘট’। দর্শনার্থীদের দেবীপ্রতিমা দর্শন করতে হবে ভার্চুয়ালি।
পুজোর মহানগরীতে তেমন ভিড় নেই। থিম আর প্রতিমার জাঁকজমকের সামনে ভিড় ঠেলে সেলফি তোলা, মণ্ডপের সামনে বসে পার্কে আড্ডা, মেলা, হুড়োহুড়ির চেনা ছবি উধাও। পুলিশের চাপও তাই কম। মণ্ডপে মণ্ডপে মাইকে পুজোর গানের বদলে বারবারই বেজে উঠছে করোনা সতর্কতার ঘোষণা। পার্ক–ক্লাব–রেস্তোরাঁয় চেনা আড্ডার বদলে বাড়িতে বসে ভার্চুয়াল আড্ডার আয়োজন অধিকাংশ জায়গায়। এই বিষয়ে ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘করোনার জেরে এটা একটা ব্যতিক্রমী বছর। অন্যবারের তুলনায় এই বছর দর্শনার্থী হাতে গোনা। মহাষষ্ঠীর দিনই ২০ শতাংশ মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছেন।’
হাতিবাগান, কলেজ স্কোয়ার, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে একডালিয়া, সিংহী পার্ক, মুদিয়ালি, সন্তোষপুর লেকপল্লি, ত্রিকোণ পার্ক— সর্বত্রই পুজো মণ্ডপের সামনের ছবিটা মোটের উপর এক। সুরুচি সংঘ, পার্ক সার্কাস সর্বজনীন বা শ্রীভূমির পুজোমণ্ডপে দেখা গিয়েছে, পুরোহিত থেকে শুরু করে ঢাকি - প্রত্যেকের মুখে মাস্ক।
দোসর হিসেবে দেখা দিয়েছে, মেঘে ঢাকা আকাশ, ঝিরঝিরে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় অশনি সংকে দেখছেন পুলিশ আধিকারিকরা। সম্ভাব্য দুর্যোগের মোকাবিলায় পুরসভা, দমকল এবং সিইএসসির সঙ্গে প্রাথমিক সমন্বয় আলোচনা সেরে রেখেছে লালবাজার। পুলিশ সূত্রের খবর, মহাঅষ্টমীতে দক্ষিণবঙ্গের অন্য জেলার সঙ্গে কলকাতাতেও ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির আশঙ্কা মাথায় রেখে পুজো উদ্যোক্তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বৃষ্টিতে জল জমে গেলে যাতে তা দ্রুত নামানো যায়, সে জন্য পুরসভার নিকাশি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে মোতায়েন রাখা হচ্ছে প্রত্যেক ডিভিশনে। তবে আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা তেমন নেই।