তাঁর একার প্রচেষ্টায় ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পায়নি কলকাতার দুর্গাপুজো। বরং দলগতভাবে কলকাতার দুর্গাপুজোর জন্য সেই ছিনিয়ে আনা গিয়েছে। তপতী গুহ ঠাকুরতাকে উদ্ধৃত করে একটি বিবৃতিতে এমনই দাবি করলেন কমলিকা মুখোপাধ্যায়।
কলকাতার দুর্গাপুজো যে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেয়েছে, তা নিয়ে দড়ি টানাটানির মধ্যেই সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায়। সেই পোস্টে দাবি করা হয়, কলকাতার দুর্গাপুজোর স্বীকৃতির পিছনে আসলে কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতার হাত আছে। পুরো কৃতিত্বই তাঁর বলে দাবি করতে থাকেন নেটিজেনদের একাংশ।
যদিও তপতী গুহ ঠাকুরতাকে উদ্ধৃত করে কমলিকা মুখোপাধ্যায়ের জারি করা বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তাঁর একার কারণেই যে দুর্গাপুজোকে স্বীকৃৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো, তা মানতে নারাজ কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী জানিয়েছেন, সম্প্রতি তিনি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকারের একাংশ তুলে বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেছেন, 'আমি যে স্বীকৃতির যোগ্য ছিলাম, তা সম্পূর্ণভাবে পেয়ে গিয়েছি। আমি দিদির থেকে নতুন করে কোনও স্বীকৃতি চাই না।'
ওই বিবৃতি অনুযায়ী, তপতী গুহ ঠাকুরতা আরও বলেছেন, ‘ইউনেস্কোর জন্য যে ডসিয়ার তৈরি করা হয়েছিল, তা একটি দলগত কাজ। যে দল ছাড়া সেটা কখনও সম্পূর্ণ হত না। তাই এটা (দুর্গাপুজোর জন্য ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা ছিনিয়ে আনার) আমার একার কৃতিত্ব, সেটা বলা অত্যন্ত ভুল।’ সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ইউনেস্কোর কাছে যে আবেদন জানানো হচ্ছে, তা কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই জানত। বিষয়টি নিয়ে যদুনাথ ভবনে বৈঠকও হয়েছিল। তাই ইউনস্কোর কাছে আবেদনের বিষয়টি কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের কেউ জানতেন না - তা বলা ভুল। যাঁদের সেই বিষয়টি জানার দরকার ছিল, তাঁরা জানতেন।
তপতী গুহ ঠাকুরতা আসলে কে?
এক দশকের বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো নিয়ে কাজ করছেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতা। ২০১৫ সালে দুর্গাপুজো নিয়ে তাঁর একটি বই (In the Name of the Goddess: The Durga Pujas of Contemporary Kolkata) প্রকাশিত হয়েছিল। গত বছর প্রকাশিত দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্গাপুজো যাতে ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা জানিয়েছেন যে তিনি ফিল্ড এক্সপার্ট ছিলেন। যাতে দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়, সেজন্য কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে খসড়া ডসিয়ার তৈরি করেছিলেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালের মার্চে সেই ডসিয়ার জমা দিয়েছিলেন। তাতে দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের মন্তব্য তুলে ধরেছিলেন।