দুর্গাপুজোর আয়োজনে রাজ্যের নেতা - মন্ত্রী ও কর্পোরেটদের আঁতাতের অভিযোগে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি পুজোসংখ্যায় তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে অনেক ছোট পুজো বন্ধ হয়ে যাবে।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কর্পোরেট যেমন শুধুমাত্র মন্ত্রীদের পুজোয় অনুদান দিচ্ছে তেমনই তাঁর দলের সরকারও তো পুরস্কার দিচ্ছে শুধুমাত্র সেই পুজোগুলিকেই। সেব্যাপারে কেন নিশ্চুপ কার্তিকবাবু।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ‘সর্বজনীন দুর্গাপুজোর ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘ক্ষমতাশালী কিছু লোক যদি সবই কুক্ষিগত করে রাখে, তাহলে সর্বজনীন দুর্গাপুজোর কি হবে? এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত। কিছু নেতা বা কিছু শক্তিশালী মানুষ, পুরোটাই নিজেদের মধ্যে কুক্ষিগত করে রাখছে। সবাইকে বলব, আপনারা সজাগ হোন, নয়তো সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী ভূমিকা নেবে এরা।’
‘কবে হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে’ লক্ষ্মী ভান্ডার নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তোপ শুভেন্দুর
কার্তিকবাবুর অভিযোগ, ‘যে কর্পোরেট সংস্থাগুলি টাকা দেয়, তারা ওই ১৫-২০টি পুজো বা কোন মন্ত্রী নেতা বা শক্তিশালী লোকজনদের বারবার দিচ্ছে। প্রতি বছর তারা সব টাকাটাই সাইফন করে তুলে নিচ্ছে। ফলে ছোট ছোট ক্লাবগুলো বঞ্চিত হচ্ছে’।
এই প্রতিবেদন নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ‘রাজ্যে প্রায় ৪৫ হাজার পুজো হয়। কয়েক বছর আগেও এটা উৎসবের চেহারা পেত। কিন্তু এখন খরচের ভারে পাড়ার পুজোগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে। নেতা - মন্ত্রীদের ১৫ – ১৬টি পুজোয় সব আটকে আছে। তারাই কর্পোরেটদের সমস্ত টাকা পাচ্ছে।’
যদিও বিরোধীদের দাবি, কুম্ভীরাশ্রু ফেলছেন কার্তিকবাবু। রাজ্যে পুজো দখলের চল শুরু হয়েছে তৃণমূলের জমানাতেই। বাম জমানায় পুজোয় নেতা - মন্ত্রীদের প্রভাব থাকলেও তৃণমূলের মন্ত্রীদের মতো তারা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে ওঠেননি। তাছাড়া তাঁর দলের সরকারও তো প্রতি বছর ঘুরে ফিরে ওই ১৫ – ১৬টি পুজোকেই পুরস্কৃত করে। তাহলে কর্পোরেটই বা সেই পুজোগুলিকে টাকা দেবে। এমনকী কলকাতার সব থেকে বিখ্যাত পুজো গুলোর মধ্যে একটি সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে না কি এবার রাজ্য সরকারি পুজো পুরস্কারের বিচারকরা যাননি। কারণ, পুজোর মূল উদ্যোক্তা বিজেপি নেতা সজল ঘোষ।
কার্তিকবাবুর বক্তব্য নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘উনি তো নিজে ৫০টা কমিটি আর অ্যাসোসিয়েশনের মাথায় রয়েছেন। হকি স্টিক কোনও দিন চোখে দেখেছেন কি না সন্দেহ, অথচ হকি অ্যাসোসিয়েশনের মাথাতেও উনি। উনি আবার কুক্ষিগত করে রাখার কথা কী বলছেন? পুরোটাই লুটেপুটে খাওয়ার বন্দোবস্তো।’
বলে রাখি, মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাট মিলন সংঘের দুর্গাপুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা।