সম্প্রতি বাংলায় বন্যপ্রাণীদের হানা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলার বিভিন্ন জেলায় প্রায়ই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতি। আবার তেমনি বাঘও ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। তারফলে যেমন বিঘার পর বিঘা ফসল নষ্ট হচ্ছে তেমনি ঘরবাড়ি, সম্পত্তি নষ্ট এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। আতঙ্কে থাকছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় হাতির তাণ্ডব লেগেই রয়েছে। এই অবস্থায় লোকালয়ে বন্যপ্রাণদের হানা রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করছে নবান্ন।
আরও পড়ুন: গুলি চালিয়েও শেষ রক্ষা হল না, কালচিনি চা বাগানে বনকর্মীকে পিষে দিল হাতি
গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে হাতির হানা নিয়ে উদ্যোগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই নবান্নে একটি জরুরি বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে বন্যপ্রাণীদের তাণ্ডব থেকে বিশেষ করে হাতির তাণ্ডব থেকে মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য একাধিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে এআই ক্যামেরা বসানো, পাশাপাশি রেডিও কলার এবং উত্তরবঙ্গের ৭ টি জায়গায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিফ্যান্ট করিডর তৈরি করা। সব মিলিয়ে ৮ দফা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সম্প্রতি, নবান্নে জেলা শাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। এছাড়া, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বন দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মনোজ আগরওয়ালও। সেই বৈঠকেই লোকালয়ে হাতি, বাঘ, গন্ডার সহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের হানা রুখতে এই পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে।
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, পুলিশ বন দফতর এবং জেলা প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়সাধন রেখে বন্যপ্রাণীদের হানা রুখতে হবে। সেইসঙ্গে জেলা শাসকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের ‘ইনসিডেন্ট কমান্ডার’ হিসেবে কাজ করতে বলা হয়েছে। এর মানে হল- এলাকায় পরিস্থিতি মোকাবেলার উপর জেলাশাসকের বিশেষ দায়িত্ব থাকবে। জানা যাচ্ছে, উত্তরবঙ্গের যে ৭টি জায়গায় এলিফ্যান্ট করিডর তৈরি হবে সেগুলি ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার চওড়া হবে।
করিডরের দু’দিকে কাটা জাল দিয়ে ঘেরা থাকবে। আর এক একটির জন্য খরচ পড়বে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা। সেই করিডরের মধ্যে হাতির পছন্দের ঘাস লাগানো থাকবে। এছাড়াও, হাতির তেষ্টা মেটানোর জন্য পুকুর কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বনের টাওয়ারে এআই ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ৫০ মিটার দূর থেকে হাতির উপর নজরদারি চালানো যাবে। ইতিমধ্যেই ঝাড়গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে এআই ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও, এদিনের বৈঠকে চোলাই, তাড়ি সহ অন্যান্য দেশি মদের বিরুদ্ধে অভিযানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। আবগারি দফতরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এদিনের বৈঠকে।