সম্প্রতি বাংলাদেশ ভাগ করে বাংলাদেশি হিন্দুদের জন্যে পৃথক রাষ্ট্র তৈরির 'ছক' দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন ভারতীয় সেনার এক অবসরপ্রাপ্ত কর্তা। সেই পোস্ট নিয়ে খবরও করেছিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। সেই পোস্টটি রিটুইট করেছিলেন ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। সেই খবরের রেশ ধরেই ফের 'বাংলাদেশ ভাগ' নিয়ে পোস্ট করলেন তথাগত রায়। বাবুল নামক এক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রাক্তন সেনা কর্তার সেই 'প্রস্তাব' সংক্রান্ত পোস্টের খবরের প্রতিবেদনটি শেয়ার করেছিলেন। তাতেই তথাগত রায় এবার লিখলেন, 'অতি উত্তম প্রস্তাব'। (আরও পড়ুন: ভারতকে 'অস্থিতিশীল করার' চেষ্টায় আছে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট: বিজেপি)
আরও পড়ুন: ৮৪'র দাঙ্গাকে 'গণহত্যা' আখ্যার প্রস্তাব, কানাডার সংসদে তারপর যা হল…
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় ভারতে সরব হয়েছেন অনেকেই। এই আবহে এবার বাংলাদেশ ভেঙে বাঙালি হিন্দুদের জন্যে এক পৃথক 'হিন্দুদেশ' তৈরির 'ফর্মুলা' দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন প্রাক্তন সেনা কর্তা জেনারেল জিডি বক্সি। তিনি সেই পোস্টে একটি ছবি আপলোড করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানচিত্রের উত্তর দিক দিয়ে একটি কালো রেখা আঁকা। বাংলাদেশের উত্তর অংশকে সেখানে একটি পৃথক দেশ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তার নাম - 'হিন্দুদেশ'। মূলত রংপুর, দিনাজপুর এলাকা নিয়ে সেই 'পৃথক দেশ' গঠনের ফর্মুলা দিয়েছেন অবরপ্রাপ্ত এই মেজর জেনারেল। (আরও পড়ুন: ধার নিল, প্রাণও নিল! বাংলাদেশে হিন্দু মহিলাকে কুপিয়ে খুন, অভিযুক্ত প্রতিবেশী)
আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় জহর সরকারের ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা তৃণমূলের
সেই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতেই এবার তথাগত রায় লিখলেন, 'এটি উত্তম প্রস্তাব। এর ফলে উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে বাকি ভারতের যাতায়াত অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে, পুরোনো অসম মেলের রাস্তা খুলে যাবে। শুধু পার্বতীপুর জংশন থেকে গীতালদহ পর্যন্ত লাইন ব্রড গেজ করে নিতে হবে।' (আরও পড়ুন: উপাসনাস্থল আইনের বৈধতা নিয়ে শুনানি শুরু হবে সুপ্রিম কোর্টে, গঠিত বিশেষ বেঞ্চ)
আরও পড়ুন: 'একমাস সময় চেয়েছিলাম...', জয়নগরের বিচারের পরে 'আরজি কর আক্ষেপ' মমতার গলায়
প্রসঙ্গত, জিডি বক্সি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, 'মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উগ্র জিহাদিবাদে পরিণত হয়েছে। তারা গণহত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশি হিন্দু সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দিতে চায়। তারা মনে হয় লড়াইয়ের জন্য মুখিয়ে আছে। ১৯৭১ সালে ৩৮০০ জনেরও বেশি ভারতীয় সৈন্য, নাবিক এবং বায়ুসেনার যোদ্ধারা এই দেশকে ঘাতক পাকবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে তাঁদের জীবন দিয়েছিলেন। কতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারে কেউ। যদি তারা হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার অব্যাহত রাখে তবে এটি একটি সম্ভাব্য সমাধান।' এরপরই বাংলাদেশ ভাগের সেই ছবিটি আপলোড করা হয়েছে। এর আগে একটা সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বহু বাংলাদেশি ভারত ভেঙে দেওয়ার দাবিতে পোস্ট করেছিলেন। তাঁদের কথায়, উত্তরপূর্ব ভারত নাকি বাংলাদেশের অংশ। আবার বাংলাদেশের নাম করা প্রফেসর অসমের বিচ্ছিনতাবাদীদের সাহায্য করার জন্যে দাবি জানিয়েছিলেন। এবার ভারতের অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্তার বক্তব্য - দেশ তৈরি করতে পারলে, দেশ ভাঙতেও পারি।
প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।