গতকাল আরজি করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার বাবা দাবি করেছিলেন, ডিসি নর্থ তাঁকে টাকা অফার করেছিলেন কেসটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে। সেই মতো নানান সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই খবরকে 'ভুয়ো' দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই ভুল তথ্য দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সাকেত গোখলে। আজ এএনআই-এর একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে সাকেত গোখলে পোস্ট করেন। তাতে ক্যাপশনে লেখেন, 'আরও প্রমাণ। নির্যাতিতার কোনও এক আন্টি মিথ্যা দাবি করেছিলেন পুলিশের টাকার প্রস্তাব দেওয়া নিয়ে। বাবা-মা করেননি। বিজেপির এই ফেক নিউজ ফ্যাক্টরি ফের কাজ শুরু করেছে।' (আরও পড়ুন: পলিগ্রাফ টেস্টে একের পর এক অবাক করা জবাব সঞ্জয়ের, বিভ্রান্তি বাড়ছে আরজি কর কেসে)
আরও পড়ুন: পুরকর্মীকে কর্মীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ TMC বিধায়কের নামে, 'না' শুনে যা করলেন নেতা…
আরও পড়ুন: আরজি কর কাণ্ডের জের, পুলিশের চাকরি ফিরিয়ে 'সাহস' দেখালেন মৃত সার্জেন্টের স্ত্রী
উল্লেখ্য, এএনআই-এর যে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ছবি সাকেত গোখলে পোস্ট করেন, সেখানে লেখা, 'নিহত ডাক্তারের আন্টি বলেন, যখন মৃতদেহ মা-বাবার সামনে পড়ে ছিল, তখন পুলিশ তাদের টাকা দিতে চেয়েছিল। এটা কি মানবিকতা?' তবে সত্যি খবর হল, নিহত চিকিৎসকের আন্টি সেই মন্তব্য করার পরে বাবা নিজেও সেই একই কথা বলেছিলেন গতকাল। এবং তা নিয়ে পরে তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য নিজেও পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সাকেত গোখলে, আর্ধেক খবর দিয়ে দাবি করলেন, নির্যাতিতার বাবা দাবি করেননি যে পুলিশ টাকা দিতে চেয়েছিল।
আরও পড়ুন: কোচবিহারে প্রতিবাদীদের ওপরে হামলার নিন্দায় কুণাল ঘোষ, 'সাবধান' করলেন দেবাংশু
গতকাল কী কী বলেছিলেন নির্যাতিতার বাবা? তিনি বলেন, 'আমরা জানতে পারছি, আরজি কর হাসপাতালে পুলিশের যে আউটপোস্ট আছে, সেখানে সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে আমার মেয়ের এরকম পরিণতির খবর যায়। তারপরও কিন্তু ওরা আমার মেয়ের কোনও শারীরিক পরীক্ষা করেনি। যেটা তাদের প্রথম কাজ ছিল, সেটা তারা করেনি। সকাল ১১ টায় আমাদের জানানো হয় যে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারা কোনও মেডিক্যাল টেস্ট করল না। তারা আগেই বলে দিল যে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের মেয়েকে দেখতে আমরা বেলা ১২ টা ১০ মিনিটে হাসপাতালে এসেছিলাম। মেয়ের মুখ দেখতে দেওয়ার জন্য আমাদের ওই সেমিনার হলের বাইরে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল এবং মেয়ের মা পুলিশের হাতে-পায়ে ধরতে শুরু করেছিল। ভিতরে তখন লোকজন ঘোরাঘুরি করছিল। আমাদের কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এটা কী কারণে? এই প্রশ্নটার উত্তর চাই আমার।' (আরও পড়ুন: থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে গর্জন, ডিন ও সহকারী ডিনের পদত্যাগ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে)
আরও পড়ুন: ক্যান্টিনে চা-সিগারেটের ২৩৮০০ টাকা বাকি রেখেই বর্ধমানকে বিদায় জানালেন বিরূপাক্ষ
এরপর চিকিৎসকের বাবা বলেন, 'পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) করতে এত দেরি কেন করল হাসপাতাল? পোস্টমর্টেম তো বিকেল পাঁচটার মধ্যে করা উচিত ছিল। কিন্তু দেখা গেল যে সন্ধ্যা ছ'টার আগে পোস্টমর্টেম হল না। সন্ধ্যা ছ'টা থেকে শুরু হল। আমি সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে টালা থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলাম। পরে দেখতে পাচ্ছি যে আমার এফআইআর নথিভুক্ত হল রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে। এখানে এত ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও, পুলিশ এত কিছু জানা সত্ত্বেও পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করল। ডায়েরি করল। কী কারণে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ - কেউ এফআইআর করেনি। যেটা সবার আগে দরকার ছিল। করেনি।'
এরপর নির্যাতিতার বাবা সেদিনকার ঘটনা নিয়ে আরও বলেন, 'আমরা দেহটা রেখে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের উপরে এত প্রেশার তৈরি করা হয়েছিল....। আমরা টালা থানায় গিয়েছিলাম। টালা থানায় আমরা এক ঘণ্টা বসেছিলাম। ৩০০-৪০০ পুলিশকর্মী আমাদের ঘিরে রেখে সেখানে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল যে বাধ্য হয়ে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই। বাড়িতে গিয়ে দেখি যে আমার বাড়ির সামনে ব্যারিকেড করে ৩০০-৪০০ পুলিশকর্মী দাঁড়িয়ে আছেন। সেই অবস্থায় আমাদের আর কিছু করার ছিল না। আমরা মেয়ের দেহ দাহ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।' পুলিশের টাকা দেওয়র প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, 'যখন আমার মেয়ের দেহ আমার ঘরে শায়িত ছিল, তখন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) আমাদের ঘরের একটা গলিতে ঢুকে ঘরের ভিতরে তিনি আমায় টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তার যে জবাব দেওয়ার, সেটা আমরা সঙ্গে-সঙ্গে দিয়ে দিয়েছিলাম।'