খড়গপুর আইআইটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়জান আহমেদের রহস্যমৃত্যুর ঘটনার দু’বছর পর উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনায় হস্টেল কর্তৃপক্ষ এমনকী পুলিশও প্রথম থেকেই আত্মহত্যা বলে দাবি করে আসছিল। কিন্তু, প্রথম থেকেই পরিবারের দাবি ছিল তাঁকে খুন করা হয়েছে। অবশেষে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের প্রায় একবছর পর ফয়জানকে খুন করা হয়েছে বলেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হল। জানা যাচ্ছে, প্রথমে তাঁর মাথায় একটি ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং ঘাড়ে ছুরি মারা হয়েছিল। তারপর কানের নিচে পিছনের দিকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়েছিল। এমন তথ্য সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ফয়জানের মৃত্যুতে সিটের তদন্তে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট, রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছরের মে মাসে ফয়জান আহমেদের দেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর গত ২১ মে একজন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তাতেই এই তথ্য সামনে এসেছে। উল্লেখ্য, সিআইডির অবসরপ্রাপ্ত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় কুমার গুপ্ত এই রিপোর্ট দিয়েছিলেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ফয়জান আহমেদের মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করার পর বাম কানের নিচে গুলি করা হয়েছিল। সেই কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। যদিও প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কোনওভাবেই এই তথ্য সামনে আসেনি। এরপরও পরিবারও খুনের অভিযোগ তুলে নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে। তারপরে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন অজয় গুপ্ত।
২০২৩ সালের জুন মাসের প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরেই তিনি জানতে পেরেছিলেন, যে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছিল। সেই সময় তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছিলেন, ছাত্রকে ভারী কিছু দিয়ে অথবা ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা ছুরিও হতে পারে অথবা ধারালো রড জাতীয় কোনও বস্তুও হতে পারে, যেটা তাঁর ঘাড়ে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে প্রবেশ করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘একজন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমার কাজ হল দেহের প্রতিটি অংশ পরীক্ষা করা।’
ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট পাওয়ার পর চলতি বছরের মে মাসে তিনি রিপোর্ট জমা দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, ফয়জান আহমেদের ডান দিকের কানের নিচে একটি হাড় অনুপস্থিত ছিল। তাছাড়া বাঁ দিকে চোয়াল ও ঘাড়ের নিচে কালশিটে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। তাতে ইঙ্গিত দেয় দেয় ডান দিক থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং বাম কানের নিচে গুলি করা হয়েছিল।
২০২২ সালে ১৪ অক্টোবর হস্টেল থেকে ফয়জান আহমেদের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এর পরের দিন তাঁর দেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। পরে ফয়জানের দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হলে মৃতদেহ খবর দেওয়া হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২৩ সালের মে মাসে অসমের ডিব্রুগড়ের কবর থেকে ফয়জান দেহ তুলে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। জানা যাচ্ছে, আগামী মাসেই এ বিষয়ে হাইকোর্টে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবেন অজয় গুপ্ত।