বাংলাদেশ থেকে আসা দরিদ্র বন্ধু কলকাতার বুকে অটো চালিয়ে রোজগার করতে চায়। তাই তার একটা পরিচয়পত্রের প্রয়োজন। এটা বলেই বড়িশার এক বৃদ্ধের কাছ থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁর ভোটার পরিচয়পত্র নেয় জেএমবি’র কলকাতা মডিউলের লিঙ্কম্যান সেলিম মুন্সি। তারপরেই কাম–তামাম। সেলিম ও তার সঙ্গী শাকিল তৈরি করে ফেলে জেএমবির বাংলাদেশের পাণ্ডা নাজিউর রহমান পাভেল ওরফে জোসেফের ভুয়ো পরিচয়পত্র। নতুন পরিচয় হয় জয়রাম ব্যাপারী। এমনকী বাবা বলে পরিচয় দেওয়া হয় বড়িশার সেই বৃদ্ধকেই, যাঁর নাম গণেশ ব্যাপারী। এবার এই তথ্য পেল গোয়েন্দারা।
কীভাবে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে তারা সেই তথ্যও হাতে এসেছে গোয়েন্দাদের। হরিদেবপুর থেকে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে গ্রেফতার হয় তিন জেএমবি জঙ্গি নাজিউর রহমান পাভেল, মেকাইল খান ওরফে শেখ সাব্বির এবং রবিউল ইসলাম। এবার এই প্রশাখা কতদূর বিস্তৃত তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। লালবাজারে জঙ্গিদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও এনআইএ আধিকারিকরা জেরা করেন। এই জঙ্গিদের সঙ্গে খাগড়াগড়ের কোনও যোগ রয়েছে কি না এনআইএ তা খতিয়ে দেখেছে। জেরার মুখে জঙ্গিরা গোয়েন্দাদের কাছে দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের জেলের ভিতরে বসেই জেএমবি নেতা আল আমিন ও নাহিদ তসনিম তাদের অন্য রাজ্যে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। নাজিউর এখন জেএমবি হলেও বাংলাদেশে সে প্রশিক্ষণ নিয়েছে আল কায়দার কাছ থেকেই। সে নিজে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ।
জেএমবির কয়েকজন সদস্য পিয়াস শেখ, আনোয়ার আলি ওরফে হৃদয়, হাফিজুল শেখ ওরফে সকাল, আবু সালে, সোহেল বা তাদের সঙ্গীরা চোরাপথে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় এসেছে কি না, সেই সন্ধান চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দাদের মতে, কলকাতায় জেএমবির দুই লিঙ্কম্যান সেলিম মুন্সি ও শাকিল কতজনের ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি ও কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করেছে তা জানা প্রয়োজন। ধৃত জঙ্গিদের ডায়েরি থেকে বেশ কিছু বাংলাদেশি ও ভারতীয় মোবাইল নম্বর উদ্ধার হয়েছে। সেগুলির সূত্র ধরে চলছে তদন্ত।
নাজিউরের ভায়রা ভাই আলআমিন নিজে হুজি জঙ্গি হওয়ার কারণে নাজিউরের সঙ্গে বাংলাদেশের হুজি নেতাদেরও যোগাযোগ রয়েছে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, সরাসরি ফোন না করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও চ্যাট করত তারা। ভিডিও চ্যাটেই লিঙ্কম্যান সেলিম মুন্সিকে বাংলাদেশ থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়, নাজিউর কলকাতায় নতুন মডিউল তৈরির কাজে যাবে। তাকে তৈরি করতে হবে ভারতীয় পরিচয়পত্র। ছাতা সারাইয়ের ছুতোয় পুরো বেহালাজুড়ে হেঁটে ঘুরত সেলিম। সেই সূত্র ধরেই পরিচয় হয় বড়িশার বৃদ্ধ গণেশ ব্যাপারীর।