একদিকে বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য বিজেপির দিকে হিন্দু ভোট আরও মেরুকরণের সম্ভাবনা। অন্যদিকে কেন্দ্রের সঙ্গ ছায়াযুদ্ধের জেরে রাজ্যে ব্যপক অনুন্নয়নের অভিযোগ। সব মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ার আগে কি চাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাই কি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটা শুরু করেছেন তিনি। গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রমে উঠছে সেই প্রশ্ন। তবে কি দিল্লির সঙ্গে কোনও গোপন বোঝাপড়া বয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর? না কি শিরে সংক্রান্তি বুঝে নিজেই সেপথে হাঁটতে শুরু করেছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৩ নভেম্বর। দীর্ঘদিনের বৈরিতা ভুলে সেদিন হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীকে ফল – মিষ্টি পাঠান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সঙ্গে একটি চিঠি পাঠান তিনি। তাতে তিক্ততা ভুলে মিষ্টি সম্পর্ক তৈরির আহ্বান জানান রাজ্যপাল। সেই উপহার গ্রহণ করে রাজ্যপালকে পালটা উপহার পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এখানেই শেষ নয়, গত সোমবার রাজ্য বিধানসভায় নব নির্বাচিত বিধায়কদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হন রাজ্যপাল। এর আগে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল ও স্পিকারের টানাপোড়েন রীতিমতো চরমে পৌঁছেছিল। এবার রীতিমতো প্রথা মেনে বিধানসভায় রাজ্যপালকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার। এর পর বিধায়কদের শপথ পাঠ করান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের মতানৈক্যে ছেদ টেনে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের সুপারিশে শিলমোহর দিয়েছেন রাজ্যপাল।
এপর্যন্ত হলে তাও ঠিক ছিল। মনে করা যেত, বিষয়টি রাজ্য ও রাজ্যপালের বোঝাপড়া। কিন্তু শুক্রবার নবান্নে ২টি বৈঠক সেই তত্ত্ব কার্যত খারিজ করে দিয়েছে। এদিন ভবানী ভবনে রাজ্যপুলিশের ডিআইজি রাজীব কুমারের সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠক করেন NIAএর ডিআইজি সদানন্দ দাতে। সেখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে পারে বলে দাতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর। এর পর পাওয়া যায় আরও এক বৈঠকের খবর। নবান্নে সেই বৈঠকে রেল, পেট্রোলিয়াম দফতর, ইসিএল, ডিভিসি ও জাতীয় সড়ক দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে মিলিত হন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। কেন্দ্রের জল জীবন মিশনের কাজ চলছে রাজ্যজুড়ে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কেন্দ্রীয় সংস্থার জমির নীচ দিয়ে জলের পাইপ নিয়ে যেতে অনুমতি পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে বৈঠকে জানান মুখ্যসচিব। মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
২০১৪ নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই তাঁকে কার্যত বয়কট করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৯ মাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। সময় যত গড়িয়েছে ততই কেন্দ্র – রাজ্য দ্বন্দ তীব্র হয়েছে। বাংলাদেশের চাপ কি মমতাকে মোদীর সঙ্গে সহযোগিতায় বাধ্য করছে? উঠছে প্রশ্ন।