বানতলার লেদার কমপ্লেক্সে ম্য়ানহোলে নেমে প্রাণ গিয়েছে তিন সাফাইকর্মীর। সেই ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে বিতর্কে জড়ালেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কারণ, তিনি যে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন, তার সঙ্গে শীর্ষ আদালতের সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকার সামঞ্জস্য নেই বলে অভিযোগ উঠছে।
রবিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফিরহাদ জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নির্দেশ পেতেই অকুস্থলে পৌঁছে যান তিনি। তাঁর প্রতিশ্রুতি, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। এবং কেউ দোষী হলে সে অবশ্যই শাস্তি পাবে।
ফিরহাদ (ববি) বলেন, তিনজন গরিব মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে এই ঘটনা চেপে যাওয়া হবে। ঘটনার তদন্ত করা হবে। এবং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রশাসন সতর্ক ও প্রস্তুত হবে।
এসবের মধ্য়েই ঘটনায় নিহত তিন শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন ফিরহাদ হাকিম। আর বিতর্ক শুরু হয় তা ঘিরেই। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে - যদি কোনও শ্রমিক ম্যানহোলে কাজ করতে নেমে মারা যান, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারকে ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ববির ঘোষণা করা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া আর্থিক পরিমাণের তিনভাগের একভাগ মাত্র!
এ নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা শুরু হতেই সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত দাবি করা হয়, ফিরহাদ হাকিম প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পরে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ খতিয়ে দেখে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট্ট এবং বিচারপতি অরবিন্দ কুমারের বেঞ্চ এই প্রসঙ্গে যে রায় দিয়েছিল, তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল - যদি কোনও শ্রমিক ম্যানহোলে কাজ করতে নামেন এবং তিনি যদি চিরদিনের মতো প্রতিবন্ধী হয়ে যান তাহলে তাঁকে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
একইসঙ্গে, আদালত এও জানিয়ে দেয়, কোনও অবস্থাতেই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকার কম হওয়া চলবে না। এখন বানতলার ঘটনার সরকার নিহতদের পরিবারকে শেষ পর্যন্ত কত ক্ষতিপূরণ দেয় সেটাই দেখার।
প্রসঙ্গত, এদিনের ঘটনায় যে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সকলেই কেএমডিএ-র অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। এদিন প্রথমে তাঁদের মধ্য়ে একজন ম্যানহোলে নামেন। বহুক্ষণ পরও তিনি বাইরে বের হয়ে না এলে আরও দু'জন নীচে নামেন। পরে তাঁদের তিনজনেরই নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।