রবিবার সকালে নারকেলডাঙায় পোড়া বস্তি দেখতে গিয়ে মুখ পুড়েছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও তোলাবাজির অভিযোগ তুলে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বস্তিবাসীরা। কিন্তু বিড়ম্বনার এখানেই শেষ নয়। এবার অভিযোগ উঠল ৪৫ হাজার টাকা দামের টি শার্ট পরে পোড়া বস্তি দেখতে গিয়েছিলেন ফিরহাদ। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রিনশট পোস্ট করে এই অভিযোগ করেছেন। জামার দাম যে ৪৫ হাজার তা মেনে নিয়েছেন ফিরহাদ। তবে তাঁর দাবি, জামা তিনি উপহার পেয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে, কেউ মেয়র তথা পুরমন্ত্রীকে এত দামি জামা উপহার দিল কেন? দিলেই বা কেন নিলেন তিনি?
শনিবার রাতে নারকেলডাঙার খালপাড় বস্তিতে বিধ্বংসী আগুন লাগে। অনেক চেষ্টায় সকালে সেই আগুন নেভায় দমকল। আগুনে প্রচুর ঝুপড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফিরহাদকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। এর পর এলাকা ছাড়েন ফিরহাদ।
ফিরহাদের নারকেলডাঙা সফরের ছবি পোস্ট করে সোমবার বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেন, যে জামা পড়ে রবিবার সকালে ফিরহাদ গিয়েছিলেন সেটির দাম অনলাইনে ৪৫ হাজার ৫ শ’ টাকা। তার স্ক্রিনশটও পোস্ট করেন তিনি। সঙ্গে লেখেন, ‘নারকেলডাঙার খালপাড়ের বস্তিতে শনিবার রাতে আচমকাই আগুন লাগে।বহু গরিব মানুষের ঝুপড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এক ঝুপড়িবাসীর মৃত্যু হয়।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রী তথা মেয়র জনাব ফিরহাদ হাকিমঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়।সেখানে তিনি Burberry নামক ব্রান্ডের টি-শার্ট পরে যায়,যার দাম ৪৫,০০০ টাকা।এই তৃণমূলের মন্ত্রীরা আবার গরিব মানুষের কথা বলে।এই বাংলায় গরিব মানুষেরা রেশন পায় না,প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পায় না,শৌচালয় পায় না।তৃণমূলের নেতারা সেই সরকারি প্রকল্প থেকে টাকা চুরি করে গরিব মানুষদের বঞ্চিত করছে। হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীরা বঞ্চিত,তারা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছে।বিষাক্ত স্যালাইন কান্ডে প্রসূতি মা-বোনদের মৃত্যু হচ্ছে। নারকেলডাঙার ঘটনায় গরিব মানুষেরা সর্বশান্ত,তাঁদের বহু বাড়ি পুড়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যেখানে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার তোলা তোলেন। টাকার বিনিময়ে বেআইনি ভাবে দোকান, ঝুপড়ি করার অনুমতি দিতেন তিনি। বিধায়কের মাসিক বেতন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।তাহলে সেখানে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম মহাশয় এতো দামি টি-শার্ট পরে যায় কিভাবে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর শাসনে বাংলার গরিব মানুষেরা বঞ্চিত। আর গরিব মানুষদের টাকা নয়ছয় করে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা ফুলেফেঁপে উঠেছে।লজ্জা! বাংলার মানুষ সঠিক সময়ে এই সরকারকে আগামী নির্বাচনে উচিত জবাব দেবে।’
অগ্নিমিত্রার অভিযোগ অস্বীকার করেননি ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘লোগো কা কাম হ্যায় কেহেনা। এই শার্টটা যদি আপনি গিফট দেন ফেলে দেব রাস্তায়? কেউ উপহার দিলে পরব না? প্রধানমন্ত্রী নিজের দশ লক্ষ টাকার শুট পরেন। সেটা কাউন্টার করাতে গেলে অন্তত ৪৫ হাজার খুঁজে পেয়েছে ভাল।’
প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে কি মেয়র ও রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদে থেকে দামি উপহার নেওয়া যায়? কোনও ব্যক্তি কেন মেয়রকে এত দামি উপহার দিলেন সেই প্রশ্ন কি উঠবে না? বিনিময়ে তিনি মেয়রের কাছ থেকে কত সুবিধা আদায় করেছেন সেই প্রশ্নও থাকবে। যেখানে বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্তাদেরও দামি উপহার নেওয়া অনৈতিক বলে বিবেচনা করা হয় সেখানে মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রীর পদে থেকে কোন নৈতিকতার নির্দশন রাখলেন ফিরহাদ? না কি টাকা হাতে না নিয়ে কাটমানি তোলার নতুন ফন্দি বার করেছেন তৃণমূলের নেতামন্ত্রীরা?