দায়িত্ব ফিরেই একাধিক থেমে থাকা প্রকল্প ত্বরান্বিত করতে উদ্যেগ নিয়েছিলেন পুর প্রশাসনিক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। তাঁর গ্রেফতারিতে করোনা মোকাবিলা ছাড়াও পুরসভার ওই সমস্ত প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন পুর আধিকারিকদের একাংশ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পাশাপাশি বিধানসভা ভোটের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের কাজের গতি শ্লথ হয়ে পড়েছিল আগেই। পুর আধিকারিকদের একাংশের দাবি, ভোটের পর দায়িত্বে ফিরে এসে সেই প্রকল্পগুলি ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ফিরহাদ হাকিম। দ্রুত বকেয়া প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে জোর দিয়েছিলেন তিনি। সেইমতো পুর আধিকারিকদের নির্দেশও দিয়েছিলেন ফিরহাদ। কিন্তু তাঁর গ্রেফতারিতে বকেয়া প্রকল্পগুলির কাজের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে পুরসভার অন্দরেই। পুরসভার আধিকারিকদের বক্তব্য, পুর প্রশাসনিক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সশরীরে উপস্থিত না থাকলে অনেক কাজের গতিই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, যে প্রকল্পগুলো এখনও পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল ধাপা উন্নয়ন প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে ধাপা সংলগ্ন এলাকায় গলফ না টেনিস কোর্ট তৈরি করা যাবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ চেয়েছিলেন ফিরহাদ ।
সেই অনুযায়ী এলাকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সমস্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা রয়েছে, তাদের নিয়োগ করতে দরপত্র ডাকা হয়েছিল পুরসভার তরফে। ধাপার যে অংশ রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফ দূষণমুক্ত করা হয়েছিল, সেখানে ‘ইকো ফ্রেন্ডলি রেভিনিউ জেনারেটিং প্রজেক্ট’ অর্থাৎ দূষণমুক্ত জমিতে এমন কোনও প্রকল্প তৈরি করার উদ্দেশ্য ছিল, যাত দূষণ না ছড়িয়েও পুরসভার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। সেজন্য সেখানে কী প্রকল্প হলে দূষণ না ছড়িয়ে রাজস্বে ঘাটতি মেটানো যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থার খোঁজ করা হচ্ছিল। কারণ ধাপার দূষণমুক্ত ওই এলাকা বাণিজ্যিক ভাবে কোনও সংস্থাকে দেওয়া যাবে না, এই শর্তেই এই প্রকল্পের একটি বড় অংশের জন্য অর্থ সাহায্য করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। তবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের শর্ত ছিল, যদি পুর কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রেখে দূষণমুক্ত জমি থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারে, তাহলে সেটা তারা করতেই পারে।
সেকারণে ওই এলাকায় বোটানিক্যাল সেন্টার, হটিকালচার সেন্টার, পার্ক, টেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট কিংবা বিয়ে বাড়ি কোনটা তৈরি করলে, দূষণ না ছড়িয়ে পুরসভার আয় বাড়বে, সেদিকেই জোর দেওয়া হয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষের তরফে। পুর কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, ২০০৯-১০ সালে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হাতে ধাপার ওই অংশের জমি দূষণমুক্ত করতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
সেই জমির স্তুূপাকৃত আবর্জনা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বৈদ্যুতিন বর্জ্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূষণমুক্ত করে দিয়েছিল। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জমে থাকা জল বার করতে নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়। এছাড়াও জঞ্জালগুলো থেকে কোনওভাবেই যাতে তরল বর্জ্য বা গ্যাস বেরিয়ে না আসে, সেজন্য নিকাশি নালাগুলো ঢাকতে বিশেষ প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এতদূর পর্যন্ত কাজ গড়ালেও ওই জমি কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেই নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি যাতে সুপারিশ করে, তার উদ্যোগ নিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু ফিরহাদ হাকিমের গ্রেফতারিতে সেই প্রকল্প ধাক্কা খেল বলেই মনে করছেন পুর আধিকারিকরা।