ডিভিসি জল ছাড়ার জেরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গ্রামবাংলায়। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি প্লাবিত। এমনই অভিযোগ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, ডিভিসি–তে থাকা রাজ্যের দুই প্রতিনিধিও ইস্তফা দিয়ে সরে এসেছেন। এই আবহে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন প্রাক্তন সাংসদ তথা কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। আজ, বুধবার ধর্মতলায় ধরনা মঞ্চ থেকে অধীর চৌধুরী জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাঁর দফতর, ডিভিসি নিয়ে কে সঠিক কথা বলছে সেটা তিনি জানতে চান। আর এই বিষয়ে বাংলার মানুষের সংশয় দূর করতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির বানভাসী পরিস্থিতি দেখতে ছুটে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া, হুগলি থেকে শুরু করে বর্ধমান, বীরভূমে গিয়ে নিজে হাতে ত্রাণ তুলে দিয়েছেন দুর্গত মানুষজনকে। আর বারবার ডিভিসির জল ছাড়ার সিদ্ধান্তকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছেড়েছে ডিভিসি। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ডিভিসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দু’বার চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বন্যা পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে বলে ৮টি জেলাকে সতর্ক করেছিল নবান্ন। আর অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নাকি তাঁর দফতর, সঠিক কথা কে বলছে?
আরও পড়ুন: রেড রোডে কার্নিভাল অনুষ্ঠিত হবে, ‘উৎসব বিতর্কের’ মধ্যেই নোটিশ জারি করল নবান্ন
হাওড়া–হুগলির পরিস্থিতি দেখেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ইচ্ছা করে ডিভিসি জল ছেড়ে বাংলাকে ডুবিয়েছে। মানুষ মারার কৌশল নিয়েছে। এটা ম্যান মেড বন্যা। যা নিয়ে আজ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়এর আগেও ‘ম্যান মেড’ বন্যার কথা বলেছেন। এখনও বলছেন। আমি এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটার তদন্ত হোক। এটা কেন্দ্রের দোষ, রাজ্যের দোষ, না উভয়ের দোষ? বাংলার মানুষ তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। আমি পাঁচবারের সাংসদ ছিলাম। আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানি। ১৯৬৪ সাল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের চুক্তি চলছে। প্রথমে বিহার, বাংলা এবং ডিভিসির মধ্যে এই চুক্তি হয়েছিল। বিহার ভেঙে যাওয়ার পর ঝাড়খণ্ড, বাংলা এবং কেন্দ্রের মধ্যে চুক্তি হয়। ডিভিসি একা সিদ্ধান্ত নিয়ে জল ছাড়তে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক, না তাঁর দফতর সঠিক? এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার।’
অধীর চৌধুরী যখন এইসব কথা বলছেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন নয়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। সেখানেই অধীরের দাবি, ‘আমার জেলাতেও বন্যা হয়। আমি কান্দি মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করে দেখিয়ে দিয়েছি, বন্যা কেমন করে ঠেকাতে হয়। কান্দি এবং ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান একই সময়ের। কান্দি মাস্টারপ্ল্যানের পর বন্যা সেখানে অতীত। কিন্তু ঘাটাল খাটাল হয়ে পড়ে আছে। সেখানে কাজের কাজ হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের পাশে না দাঁড়িয়ে অন্য জেলার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন।’