ইজরায়েলি পেগাসাস স্পাইওয়্যার নিয়ে সতর্ক হলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী। ত্যাগ করে দিলেন তাঁর সমস্ত স্মার্টফোন। পুরনো ফোনের ব্যবহার শুরু করলেন। একইসঙ্গে স্মার্টফোন ব্যবহারে রাশ টানার জন্য তাঁর দফতরের অন্যান্য কর্মীদেরও সতর্ক করলেন তিনি। যাতে তাঁরা স্মার্টফোন ছেড়ে চিঠি লেখার অভ্যাস শুরু করেন, সেই পরামর্শও দিয়েছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
পেগাসাস বিতর্ক শুরুর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের স্মার্টফোনের পিছন দিকের ক্যামেরার অংশে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে ফেলেছেন বলে দেখিয়েছেন। তারপরেই নিজের পাঁচটি স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন বনমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, জ্যোতিপ্রিয় জানিয়েছেন, এখন থেকে আর কোনও হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ ব্যবহার করবেন না তিনি। তার বদলে তথ্য আদানপ্রদান করবেন চিঠির মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘চারিদিকে যা ঘটনা ঘটে চলেছে, তার থেকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের ফোনের ক্যামেরার উপরে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রেখেছেন। সেটা দেখেই আমি বুঝলাম যে, সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে সেই পুরনো বোতাম টেপা ফোনই। সে কারণেই স্মার্টফোন ছেড়ে দিলাম।’
গত ১৮ জুলাই ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘দ্য ওয়ার’-সহ ১৭ টি সংবাদমাধ্যমের একটি গোষ্ঠীর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘পেগাসাস’ নামে পরিচিত একটি ফোন হ্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী হাজার-হাজার মানুষকে নিশানা করা হয়েছিল। ‘দ্য ওয়ার’-এর প্রতিবেদনে সোমবার দাবি করা হয়েছে, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। সম্ভাব্য তালিকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছিল বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
যদিও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরকার ওই প্রতিবেদনগুলিকে ‘মাছ ধরার অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সঙ্গে জানিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের উপর সরকারি নজরদারি চলছে, সেই দাবির স্বপক্ষে কোনও মজবুত ভিত্তি বা সত্যতা নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বলা হয়, ‘মৌলিক অধিকার হিসেবে বাকস্বাধীনতার প্রতিজ্ঞা হল ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি। আমরা সর্বদা খোলামেলা কথোপকথনের সংস্কৃতিতে জোর দিয়ে একটি অবগত নাগরিক সমাজের পক্ষে থেকেছি।’ পরে পেগাসাস 'হ্যাক'-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈষ্ণ সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট-সহ অতীতে এই ধরনের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে সবপক্ষ। এই অভিযোগের কোনও তথ্যগত ভিত্তি নেই।’ পুরো বিতর্কের সঙ্গে কেন্দ্র বা বিজেপির নাম জড়ানোর জন্য ছিঁটেফোটা প্রমাণও নেই বলে দাবি করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ।