বামফ্রন্ট সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১১ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতিক মহলে। তবে আজও তাঁর স্মরণীয় বক্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে। কারণ এখন বিজেপির বহু নেতা–মন্ত্রী–সাংসদ দাবি তোলেন উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করতে হবে। কেউ কেউ আবার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তোলেন। এমনকী উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলির সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে জুড়ে দিয়ে ভাগ করার কথা বলেছেন বাংলার বিজেপি নেতারা। সেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই ভাগের বিরুদ্ধে ছিলেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন প্রকৃত ভারতীয় কমিউনিস্ট যিনি মনে করেছিলেন যে, সমাজতন্ত্র যে মাটিতে এসেছে সবসময় সেই দেশের মতো করেই সমাজতন্ত্র আসবে এমনটা নয়। আমাদের দেশে সমাজতন্ত্র আসলে সেটা আসবে আমাদের দেশের মতো করে! তাই তো বুদ্ধবাবু তাঁর বই ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’–তে লিখেছিলেন, ‘যে বিষয়টি বাস্তবে প্রমাণিত সেটিই সত্য, শুধুমাত্র তত্ত্বে নয়—এই মার্কসীয় ধারণাকেই আমি আঁকড়ে ধরে থাকার চেষ্টা করেছি।’ তবে উত্তরবঙ্গ বিভাজন নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কোনও বিভাজন হবে না। উত্তরবঙ্গের মানুষ আমাদেরই ভাই– বোন। আমরা এক ছিলাম এক থাকব। কেউ এই বিভাজন করতে চাইলে রেয়াত করা হবে না।’
আরও পড়ুন: ‘বাংলার মানুষকে একদিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে....’, অভিমান শেষপর্যন্ত রয়েই গেল বুদ্ধবাবুর
সম্প্রতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় দেখতে গিয়ে পাম অ্যাভিনিউর বাড়ির থেকে বেড়িয়ে এসে বলেছিলেন, ‘সত্যিকারের কমিউনিস্ট কেমন হয় তা আজ দেখলাম। অনেকেই নিজেকে কমিউনিস্ট বলে গর্ব অনুভব করেন কিন্তু বুদ্ধবাবুর মতো কমিউনিস্ট সকলে হয় না।’ মেট্রো চ্যানেলের এক সভা থেকে উত্তরবঙ্গ বিভাজনের বিরুদ্ধে সেদিন গর্জে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজ এই দাবি নিয়ে বিজেপি যখন সোচ্চার তখন সবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাই মনে পড়ছে। এখন এই বিভাজনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে সদ্য বিধানসভার অধিবেশনে এই বিভাজন নিয়ে প্রস্তাব আনা হয়। তৃণমূল কংগ্রেস এই বিভাজনের বিরুদ্ধে থাকা প্রস্তাবে সমর্থন করেন। তারপর শাসক–বিরোধী হাত তুলে উত্তরবঙ্গকে এক রাখার সিদ্ধান্তে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। বাংলা ভাগ হবে না বলে সোচ্চার হয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। জীবন সায়াহ্নে এসে সেটাই হল। বাংলা ভাগ হল না। এক থাকল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। চলে গেলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রেখে গেলেন অখণ্ড বাংলা। যার জন্য লড়াই জারি ছিল। আজ, বৃহস্পতিবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত হওয়ার পর উত্তরবঙ্গ ইস্যু আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল।