বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান হয়েছে। আজ, শুক্রবার তাঁর দেহ এনআরএস হাসপাতালে দান করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন তাঁর। এমনকী জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষভাবে পরিচিতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কারণ তাঁর হাতেই বাংলার ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের সমাপ্তি ঘটে। তবে এই ঘটনার পরও কাউকে তিনি দায়ী করেননি। বরং পশ্চিমবঙ্গে লালদুর্গের পতনের জন্য আত্মবিশ্লেষণে মনোযোগী হন তিনি। তবে বাংলা থেকে বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার পর এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যা আজও প্রাসঙ্গিক।
৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের পতনের ক্ষেত্রে কোথায় ভুল ছিল? জবাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘অনেকগুলি ক্ষেত্রে ভুল হয়েছিল। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অন্তত দু’একটি জায়গায় আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সচেতন হওয়া উচিত ছিল। জমিতে হাত না দিয়েও এমন একটা প্রচার হয়ে গেল নন্দীগ্রামে, ভাবা যায় না। অর্থাৎ আমাদের বিরুদ্ধে জমিটা প্রস্তুত ছিল।’
আরও পড়ুন: ‘আশা করি, আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে’, ইউনুসকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা মমতার
এরপরই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঔদ্ধত্য, দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠছে? সপাটে বুদ্ধবাবুর জবাব, ‘সেটা সরকারের একটা দিক। মূলত জমিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে থেকে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছিল। দলে একটা প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলাম। সাধারণ নাগরিকের জীবনে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ, মাতব্বরি। এলাকা ধরে, অঞ্চল ধরে এইসব মাতব্বরি, অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। কারণ মানুষ এসব একেবারে চান না। সবকিছুতেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিপিএম হাত বাড়াচ্ছে। এটা হতে পারে না। বন্ধ করতে হবে। সেগুলি আমরা শোধরাচ্ছি।’
বুদ্ধবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, এখন ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর বেনোজলের কথা বলা হচ্ছে। মানুষ কি এখন সরে যাচ্ছেন? তৎকালিন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কিছু মানুষ সরে গিয়েছে। কিছু মানুষ এখনও সরেনি। জেলা, অঞ্চল ধরে সেগুলি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে আমাদের।’ এভাবেই দলের প্রতি বার্তা দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এমনকী তখন যা বলেছিলেন আজও সেটাই করণীয় সিপিএমের বলে মনে করা হচ্ছে। যেটা হয়নি। দেখে যেতে পারলেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে কি সিপিএম? আজও এই প্রশ্ন রয়ে গেল বুদ্ধবাবুর প্রয়াণের পর।