বরাবরই সিপিআইএমে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস। কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। রাজ্য কমিটির সম্পাদক, পলিটব্যুরো সদস্য ছাড়া কোনও সংসদীয় পদে কোনওদিন ছিলেন না। কিন্তু তাঁর প্রখর বুদ্ধি দলের ভেতরে–বাইরে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। এমনকী সিপিআইএমের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ কমিটিতে তাঁর গুরুত্ব ছিল সর্বজনবিদিত। তিনি বরাবরই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধী ছিলেন। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের দৈনিক মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় বুধবার একটি উত্তর সম্পাদকীয় লিখেছেন প্রয়াত সিপিআইএম নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস। আর তা নিয়েই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তবে তিনি কোনও রাজনৈতিক নিবন্ধ লেখেননি। তাঁর নিবন্ধের বিষয় ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’। বুধবার লেখাটির প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ধারাবাহিক কিস্তি প্রকাশিত হবে।
এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বাংলায় অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’। তবে ‘গোঁড়া’ সিপিআইএম অজন্তার এই কাণ্ডে রাজ্য–রাজনীতিতে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছে। এই ইস্যুতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। অনিল বিশ্বাসের মেয়ে ‘জাগো বাংলা’য় লেখা— এটা ঠিক হজম করতে পারছেন না পক্ককেশধারী সিপিআইএম নেতারা। অজন্তা বিশ্বাস পেশায় অধ্যাপক। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রে সেভাবেই তাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আর এই উত্তর সম্পাদকীয়তে যে ‘স্ট্রিপ’ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে উল্লেখ রয়েছে ‘বাসন্তীদেবী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’।
এই নারীশক্তির আন্দোলন থেকে অবদানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও আসতে চলেছে বলে খবর। আর তা নিয়েই যত জলঘোলা হচ্ছে। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে বাসন্তীদেবীর সঙ্গেই ঊর্মিলাদেবী, সুনীতিদেবী, সরোজিনী নাইডু, মোহিনী দাশগুপ্ত প্রমুখের নাম। প্রথম কিস্তিতে কোথাও মমতার নাম না এলেও পরের কিস্তিতে আসবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ বাম সমর্থিত অধ্যাপক সংগঠনের সদস্য হয়েও ‘চিরশত্রু’ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় লেখা—মেলাতে পারছেন না অনেকেই। অনিল বিশ্বাসের সঙ্গে মমতার চিরকালই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তুঙ্গে থেকেছে।
এদিনের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে অজন্তা বিশ্বাসের এই প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘সাধারণত লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমরা হস্তক্ষেপ করি না। উনি পার্টির সঙ্গে জড়িত। পার্টি লাইন কোথাও ভাঙছেন কি না, তা দেখার বিষয়।’ একসময় অনিল বিশ্বাসকেই বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘দিদি থেকে দিদিমা হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হবে না।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে হয়নি তাঁকে। তবে তিনি তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁর দলের মুখপত্রেই প্রকাশিত হল অজন্তা বিশ্বাসের উত্তর সম্পাদকীয়!