খাস কলকাতায় বসে মার্কিন নাগরিকদের ফোনে প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করল লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ঘটনায় তিলজলা ও কসবা এলাকা থেকে চার প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কলকাতার বুকে রীতিমতো কল সেন্টার খুলে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছিল জালিয়াতরা। কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সারিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করা হচ্ছিল মার্কিন নাগরিকদের। লুঠে নেওয়া হচ্ছিল ডলার। সে দেশের বাসিন্দাদের আইটি পরিষেবা দেওয়ার নামে জবরদস্তি টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছিল লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ঘটনার তদন্তে নেমে তিলজলা ও কসবা এলাকা থেকে ওই চারজন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম শেখ টিপু, আহমেদ ইরশাদ, জোহা খান ও কামালউদ্দিন। শুক্রবার ধৃত চার অভিযুক্তকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে, ৩০ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতদের কাছ থেকে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
কীভাবে জালিয়াতির ফাঁদ পেতেছিল অভিযুক্তরা? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জালিয়াতরা দু’ধরনের অ্যাপ ব্যাবহার করছিল। প্রথমটি মিরর অ্যাপ অন্যটি ভাইরাস সফটওয়্যার। অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছ, ওই দুই এলাকায় অভিযুক্তরা কল সেন্টার খুলে বসেছিল। সেখান থেকে প্রথমে মার্কিন নাগরিকদের ফোনে যোগাযোগ করা হত। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকদের টার্গেট করা হত। তাঁদেরকে ভুয়ো আইটি সংস্থার কর্মী পরিচয়ে প্রথমে ফোন করা হত। টার্গেট হওয়া গ্রাহকতদের বলা হত তারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ সারানোর পরিষেবা যুক্ত রয়েছে। এরপর ই-মেলে পাঠানো হত মিরর অ্যাপ। তাঁদের সিস্টেম চেক করার অজুহাতে অ্যাপটি তাঁদেরকে ডাউনলোড করে নিতে বলা হত। অ্যাপটি ডাউনলোড করার সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের নিয়ন্ত্রণ চলে আসত প্রতারকদের হাতে। তারপর ল্যাপটপের মধ্যে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কের তথ্য খতিয়ে দেখত প্রতারকরা।
একই পদ্ধতি ব্যবহার করে কলকাতায় বসেই গ্রাহকদের সিস্টেমে পাঠানো হত ভাইরাস সফটওয়্যারও। এই ভাবেই তাদের ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের স্ক্রিন ফাঁকা করে দিত প্রতারকেরা। তারপর তাঁদের ফের ফোনে যোগাযোগ করে বলা হত যে, তাঁদের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেটাকে সারিয়ে দেওয়ার নাম করে ভাইরাস সফটওয়্যারটি আন-ইনস্টল করে পুনরায় সারিয়ে দেওয়া হত সিস্টেমগুলো। এর পরই গ্রাহকদেরকে মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হত। তারপর নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ওই গ্রাহককে পাঠিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছিল। গ্রাহকরা সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ডলারে পেমেন্ট করতে বাধ্য হতেন। এই ভাবেই চলছিল লোক ঠকানোর কাজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন প্রতারিত মার্কিন নাগরিকের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে জালিয়াত চক্রের পর্দা ফাঁস করল কলকাতা পুলিশ।