বঙ্গ–বিজেপির অঙ্গ শোভায় এখন চার সাংসদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। আর তাতেই যেন একুশের নির্বাচনের পরাজয়টা ভুলতে চাইছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। নিশীথ প্রামাণিক—স্বরাষ্ট্র, যুব এবং ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। ডাঃ সুভাষ সরকার—শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। বন্দর, জাহাজ ও জলপথ পরিবহণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন—শান্তনু ঠাকুর। আর সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন—জন বারলা। এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই ব্যাপক রদবদলে বাংলা কী পেল?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিসেবে, নিশীথ প্রামাণিকের জন্য পাশে থাকবে কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের রাজবংশী ভোট। শান্তনু ঠাকুরের জন্য বিজেপিকে সমর্থন দেবে মতুয়া সমাজ। উত্তরবঙ্গের চা–বাগান শ্রমিক, কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখেই আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বারলার অন্তর্ভুক্তি। আগামী লোকসভা নির্বাচনের সমীকরণে নরেন্দ্র মোদীর মাথায় রয়েছে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের উন্নয়নের ইস্যু। তাই তাঁর মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়েছে বাঁকুড়ার সংসদ সদস্য সুভাষ সরকারকে। অর্থাৎ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া ছাড়া আর কোনও লক্ষ্য নেই। তাই বাংলা রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই পেল না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এই চার সাংসদ যে মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সেখান থেকে রাজ্যে বিরাট কোনও বিনিয়োগ আসবে না। কেন্দ্রীয় তহবিলও রাজ্যে আসবে না। বাকি রইল কর্মসংস্থান। তাও এখান থেকে সম্ভব নয়। বরং তাঁদের দিয়ে রাজ্যের কিছু উন্নয়ন আটকে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। সেটাকেই ফলাও করে দেখিয়ে ভোটের ময়দানে বাজিমাত করা যেতে পারে। আবার কোনও প্রকল্পের কথা বলে তা রাজ্য করতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোচবিহার লোকসভার অধীন ছ’টি বিধানসভাতেই এবার জয়ী হয়েছে বিজেপি। তাই নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে এসে একদিকে যেমন রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ককে নিজের হাতে রেখে দিলেন মোদী, তেমনই একুশের নির্বাচনে ভালো ফলের কারণেও তাঁকে পুরস্কৃতও করা হল।
জন বারলা চা–বাগান শ্রমিকদের নেতা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে চা–বাগানগুলির উন্নতি। বন্ধ চা বাগান খোলার দাবিতে বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলিও। একজন চা–শ্রমিক নেতাকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। কারণ এবার সরাসরি সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন বারলা। ফলে চা বাগানের মানুষের কাছে মন্ত্রীর মাধ্যমে পৌঁছনো তুলনায় অনেক সহজ হবে কেন্দ্রের। সুতরাং ভোটব্যাঙ্কের নিরিখে তাঁরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেও বাংলার মানুষ কিছুই পেলেন না।