দিঘার সমুদ্রের জল তখন দু’জনের পা স্পর্শ করছে। একে অন্যের কোলে মাথা দিয়ে রোম্যান্সের মুহূর্ত উপভোগ করছেন দু’জনেই। আকাশের বাঁকা চাঁদ দেখে প্রেমিক তখন প্রেমিকার ক্লিভেজের সঙ্গে তুলনা করছেন। লজ্জায় প্রেমিকা মুখ গুঁজে দিচ্ছেন প্রেমিকের বুকে। আর প্রেমিকাকে তখন বাহুডোরে ধরে রেখেছেন প্রেমিক। এই জমাটি মুহূর্তের পর যে একদিন প্রেমিকার জীবনে নির্মম হত্যা নেমে আসবে তা কল্পনা করতে পারেননি তিনি। এই প্রেমিক–প্রেমিকা হলেন ভগ্নিপতি এবং শ্যালিকা। দিঘার সমুদ্র সৈকতে এমনভাবেই একে অন্যের কাছাকাছি এসেছিলেন। যে একান্ত মুহূর্তে দু’জনের থাকা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেই পরিবারে অশান্তি শুরু হয়। ভগ্নিপতির নম্বর তখন ‘ব্লক’ করে দেন শ্যালিকা। আর তার জেরেই রিজেন্ট কলোনির নির্মীয়মাণ বাড়িতে খুন হন খাদিজা বিবি। গল্ফগ্রিন থেকে মহিলার কাটা মুণ্ড রহস্যের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেয়েছে সিট।
পুলিশ অফিসাররা ফেসবুকের ওই ছবিগুলি উদ্ধার করে খতিয়ে দেখেন। যে নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেই বাড়িতেই শ্যালিকার দেহ কেটে তিন টুকরো করে ভগ্নিপতি আতিউর বলে অভিযোগ। মাথা একটিতে, শরীরের উপরের অংশ আর একটিতে এবং নীচের অংশ আলাদা বস্তায় ভরে মাঝরাতেই ওই নির্মীয়মাণ বাড়ির পিছনে ফেলে দেয় ভগ্নিপতি। শ্যালিকার কাটা মাথা প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ফেলা হয় গ্রাহাম রোডের আবর্জনায়। তদন্ত নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে ভগ্নিপতিকে। মগরাহাটের বাসিন্দা আতিউর লস্কর প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ছিল শ্যালিকাকে। ধৃত স্বীকার করেছে, শ্যালিকা খাদিজার সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। আতিউর খাদিজার ছোট বোনের বর।
আরও পড়ুন: সদস্য সংগ্রহ নিয়ে চাপে বিজেপি, গায়ে হলুদের সময়েও মিসড কল দেওয়াতে হাজির শমীক
ওই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও কাছে নিয়ে আসতেই একমাস আগে তাঁরা দিঘা বেড়াতে যান। সমুদ্রসৈকতে দু’জনে অনেকটা কাছে আসে। সেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবিই পরে পোস্ট হয় ফেসবুকে। তাও খাদিজাকে কিছু না জানিয়েই। সেই ছবিগুলি দেখার পরই বোনের সঙ্গে খাদিজার তুমুল ঝগড়া হয়। তখনই আর সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চান না বলে আতিউরের নম্বর ‘ব্লক’ করে দেন খাদিজা। পুরনো নম্বর ফেলে দিয়ে নতুন নম্বরও নেন খাদিজা। তার জেরে শ্যালিকার সঙ্গে আতিউর কোনও যোগাযোগ করতে পারছিল না। আতিউর রঙের মিস্ত্রির কাজ করত। আর যে প্রোমোটারের কাছে আতাউর কাজ করত তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন খাদিজা। তাই আতিউর খাদিজার নতুন নম্বর জোগাড় করতে বেগ পায় না।
তারপর ওই নম্বরে শ্যালিকাকে ফোন করে আতিউর। আর খাদিজার কাছে ক্ষমা চায় সে। তাতে খাদিজাকে আতিউর ডেকে পাঠায়। অনেক কাকুতি–মিনতি করেই খাদিজাকে রিজেন্ট কলোনির নির্মীয়মাণ বাড়িতে নিয়ে যায় আতিউর। ওই নির্মীয়মাণ বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার কেউ ছিলেন না। ওই ফাঁকা বাড়িতে শ্যালিকাকে ঘনিষ্ঠভাবে পেতে চায় আতিউর। কিন্তু শ্যালিকা খাদিজা সরাসরি জানিয়ে দেন, আর এভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজি নয় সে। পুরনো কথা তুলে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। তখনই শ্যালিকার মাথায় আঘাত করতেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন খাদিজা। তখন মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা টিপে খুন করা হয়। আর রঙ করার পাত দিয়ে দেহ টুকরো করে আতিউর বলে পুলিশ সূত্রে খবর।