ফের রাজভবন–নবান্ন সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। ফোনে আড়িপাতা (পেগাসাস) কাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। এই সংক্রান্ত রিপোর্ট এবং নথিপত্র খতিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু তা আসেনি তাঁর কাছে। তখন তিনি সরাসরি মুখ্যসচিবকে ফোন করে বিষয়টি মনেও করিয়ে দেন। তারপরও নবান্ন থেকে কোনও নথি রাজভবন পৌঁছয়নি। এরপরই তিনি অপমানিতবোধ করেন। আর টুইট করেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ফোনে আড়িপাতা (পেগাসাস) কাণ্ডের তদন্তে রাজ্যের কমিশন গঠনের সরকারি পদ্ধতিগত নথি রাজভবনে পাঠানোর জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য প্রশাসনেকে ‘শেষ সুযোগ’ দেওয়া হচ্ছে।’ এমনকী আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে পাঠাতে হবে বলে টুইটে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
এই পেগাসাস কাণ্ডে তোলপাড় হযে গিয়েছিল সংসদ। নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিরোধীদের চাপে কোণঠাসা হতে হয়েছিল। প্রকাশ্যে এসেছিল কাদের ফোনে আড়িপাতা হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ফোনে পর্যন্ত আড়িপাতা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তখন পেগাসাস ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন ভীমরাও লোকুর এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করে রাজ্য সরকার। সেই কমিশন কাজও শুরু করে। যার সরকারি বিজ্ঞপ্তি এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিল রাজভবন। যা আসেনি। তাই রাজ্যপাল আজ সময় বেঁধে ‘শেষ সুযোগ’ দিচ্ছেন বলে চাপ বাড়াতে চেয়েছেন।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেন, ‘রাজ্যপাল নিজেকে রাজ্য সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলছেন। এই সরকারটা যে তাঁরও সেটা তিনি ভুলে যাচ্ছেন। কোন দায় থেকে তাঁর এই ভূমিকা সেটা জানতে ইচ্ছে করে। তথ্য দেওয়া বা নেওয়া— যা হবে, সেটা হবে সংবিধান এবং আইনের মধ্যেই। তার বাইরে নয়।’
এই পেগাসাস নিয়ে গোটা দেশ তোলপাড় হযে গিয়েছিল। এই স্পাইওয়্যার দিয়ে বিরোধীদের ফোনে কেন্দ্রীয় সরকার আড়ি পেতেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে মামলা পর্যন্ত গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টও পেগাসাস নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দেয়। রাজ্যেও তদন্ত কমিশন কাজ চালাচ্ছে। এমনকী নোটিস পাঠানো হয়েছে অন্তত ২১ জনের কাছে। তাঁদের বক্তব্য জানাতে বলেছে কমিশন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের নথি তলব এবং শেষ সুযোগের হুঁশিয়ারি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।