পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে প্রধানত টুইট–অস্ত্রের ব্যবহার করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার তেমনই একটি টুইটে ২০১৯ সালে রাজ্য সরকারের একটি অর্ডারের ছবি পোস্ট করেন তিনি। আর সেই পোস্টকে ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। এক টুইটার ব্যবহারকারীর অভিযোগ, রাজ্যপাল যে স্ক্রিনশট পোস্ট করেছিলেন তাতে প্রেরকের নাম ছিল ‘আরএসএস সুধীর’। যদিও সেই টুইটটি পরে তিনি মুছে দিয়েছেন। তবে আগের পোস্টটি অনেকেই ডাউনলোড করে তা ফের পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যপাল–আরএসএস সম্পর্ক নিয়ে ট্রোল করতে শুরু করেছেন।
শমীক রায়চৌধুরী নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী সেই পুরনো ‘বিতর্কিত’ ছবিটি রিপ্লাই করে পাঠিয়েছেন জগদীপ ধনখড়কে। যাতে রয়েছে ‘আরএসএস সুধীর’–এর নাম। যদিও রাজ্যপালের টুইটার টাইমলাইনে সেই পোস্টটি একইরকম রয়েছে, শুধু ওই অর্ডারের স্ক্রিনশটের ওপরে ‘আরএসএস সুধীর’–এর নামটি এখন আর নেই। শমীক রায়চৌধুরীর দাবি, আগের স্ক্রিনশটটি ক্রপ করে বা কেটে ফের পোস্ট করা হয়েছে।
রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে টুইটে শমীক লিখেছেন, ‘এটি হচ্ছে ১০ মিনিট আগে করা আপনার আসল টুইট। আপনি আরএসএস সুধীর–এর পাঠানো একটি মেসেজের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু সেটি এখন ক্রপ করে বা কেটে ফের পোস্ট করেছেন আপনি।’ শমীক তাঁর টুইটে রাজ্যপালকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এই আরএসএস সুধীর কে? আপনার সঙ্গে এর কী সম্পর্ক? আপনার মোবাইলে এর নম্বরই বা রয়েছে কেন?’
রাজ্যপাল তাঁর ওই বিতর্কিত টুইটে রাজ্য সরকারের ওই অর্ডার পোস্ট করে রাজ্যে আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘রাজ্যে যেভাবে আল কায়দা জঙ্গিরা নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে এবং অবৈধ বোমা তৈরির কারখানা গজিয়ে উঠছে তাতে পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। আর এ সব হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে রাজ্য সুরক্ষা উপদেষ্টা এবং রিনা মিত্রকে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করার পর।
পরের আর এক টুইটে রাজ্যপাল প্রশ্ন করেছেন, ‘ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা কেন নিজেদের দায়িত্বে স্বচ্ছ হন না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন এদের হয়ে জবাবদিহিতা করেন? তাঁদের দায়িত্ব ও কার্যকলাপের ব্যাপারে রাজ্যপালকে কেন জানানো হয় না? সম্পাদন! এত কিছুর পরও রাজ্যের আইন–শৃঙ্খলা কেন রক্ষা করা যাচ্ছে না?’
ওদিকে, টুইটে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁরাও কাজে লাগিয়েছেন শমীক রায়চৌধুরীর শেয়ার করা রাজ্যপালের সেই বিতর্কিত পুরনো টুইটের স্ক্রিনশটটি। আবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও কাকলি ঘোষ দস্তিদারের টুইট তৃণমূলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় টুইটে লিখেছেন, ‘ভারতের কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের প্রথম এবং প্রধান করণীয় হল স্থানীয় কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না রাখা। তার এ সব থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। কিন্তু আমাদের জগদীপ ধনখড় বিজেপি–র আঙুলের ইশারায় চলেন আর আরএসএসের দেওয়া আদেশ পালন করেন।’