আত্মহত্যার রোখার প্রচেষ্টায় দুর্ঘটনা বাড়বে না তো? কলকাতা শহরের উত্তর-দক্ষিণ রুটের সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলির প্ল্যাটফর্মে আত্মহত্যা রোখার জন্য প্ল্যাটফর্মে গার্ডরেল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই তৈরি হয়েছে নয়া জল্পনা।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে গার্ডরেল বসানো হয়েছে। উদ্দেশ্য, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পর যাতে কেবলমাত্র গার্ডরেলবিহীন ফাঁকা অংশগুলিই যাত্রীরা ট্রেনে ওঠা-নামা করার জন্য ব্যবহার করেন।
কিন্তু, এভাবে কি আদৌ আত্মহত্যা রোখা সম্ভব? কারণ, যদি কেউ ট্রেন আসার মুহূর্তে ওই ফাঁকা অংশ দিয়েই লাইনে ঝাঁপ মারেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে আটকানো যাবে? যদি না আগে থেকে থেকে কেউ তাঁর উদ্দেশ্য আন্দাজ করতে পারেন?
উপরন্তু, বর্তমানে কলকাতা মেট্রো রেলের উত্তর-দক্ষিণ রুটে তিনটি সংস্থার তৈরি কোচ ব্যবহার করা হয়। ফলত, এই তিন ধরনের কোচের স্বয়ংক্রিয় দরজারগুলির মধ্যেকার দূরত্ব সমান নয়।
১৮০ মিটার দীর্ঘ প্ল্যাটফর্ম পুরোটা ফাঁকা থাকলে দরজার মধ্যেকার এই দূরত্বের তারতম্যে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু, প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট দূরত্বে গার্ডরেল বসানো থাকায় অনেক সময়েই স্বয়ংক্রিয় এক বা একাধিক দরজা সেই গার্ডরেলের সামনে পড়ে যাচ্ছে।
ফলে যাত্রীদের ওঠানামা করে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, এভাবে আত্মহত্যা ঠেকানো অসম্ভব। বরং, এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে অফিস টাইমে দুর্ভোগ মারাত্মক বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন নিত্যযাত্রীরা।
প্রসঙ্গত, কলকাতা পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো রেলের প্রত্যেকটি স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের দুই ধারে রয়েছে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় স্লাইডিং ডোর। যা ট্রেনের কামরার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি করা।
ট্রেন প্ল্যাটফর্মে এসে থামার পরই সেই দরজা খোলে। ফলে কারও পক্ষেই সেই নিরাপত্তাবেষ্টনী টপকে লাইনে ঝাঁপ দেওয়া কার্যত অসম্ভব। কিন্তু, গার্ডরেলে সেই সুবিধা নেই। বরং, এতে জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে, ইতিমধ্যেই কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের একদিকের প্ল্যাটফর্মে মোট ৩১টি গার্ডরেল বসানো হয়েছে বলে মেট্রো রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। আগামী দিনে বাকি স্টেশনগুলিতেও একই ব্যবস্থা করা হতে পারে।
কিন্তু, এর মধ্যেই মেট্রোর এই উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করায়, এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত এই ব্যবস্থাপনাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘খামখেয়ালি’ সিদ্ধান্ত বলে সমালোচনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থায় গার্ডরেল বসিয়ে আদতে অর্থের অপচয় করা হচ্ছে।
যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরোটাই পরীক্ষামূলকভাবে করা হচ্ছে। যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা খতিয়ে দেখার পরই এই বিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করা হবে।