উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহর থেকে বিশেষভাবে সক্ষম এক ব্যক্তি ট্রাইসাইকেলে করে আসছেন। এই তিন চাকার হাত সাইকেল চলেছে মাইলের পর মাইল। কোথায় যাচ্ছেন এই ব্যক্তি? প্রশ্ন জেগেছিল সকলের মনে। কাছে যেতেই দেখা গেল ওই তিন চাকার হাত সাইকেলের চারদিক লাল পতাকায় মোড়া। নিজেও পরে আছেন লাল গেঞ্জি। মাথায় লাল টুপি। এই তিন চাকার হাত সাইকেল যখন থামল তখন তিনি এসে পৌঁছেছেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে। যেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
এমন দৃশ্যই দেখা গিয়েছিল মহানগরী কলকাতায়। ৭২ কিলোমিটার টানা এই তিন চাকার হাত সাইকেল চালিয়ে ওই বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি এলেন। অসীম মনের জোর আর ভালবাসা না থাকলে এই কাজ যে সম্ভব নয় তা উপস্থিত সকলেই তখন বুঝতে পেরেছেন। অসুস্থ প্রিয় নেতাকে দেখতে এভাবেই জীবনের প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে এলেন হালিশহর পুরসভার বাসিন্দা রবি দাস। গত শনিবার হালিশহর থেকে রওনা দিয়েছিলেন। আর সোমবার রাতে তিনি পৌঁছন আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। ট্রাইসাইকেলে লাল ঝান্ডা লাগিয়ে হাজির হলেন তিনি। আর হাসপাতালে এসে বললেন, ‘বুদ্ধবাবু যতদিন না সুস্থ হয়ে উঠছেন, ততদিন হাসপাতাল চত্বরেই থাকব আমি।’
প্রিয় নেতার প্রতি অগাধ ভালবাসায় জীবনের চড়াই–উতরাইকে পিছনে ফেলে এভাবেই এগিয়ে এলেন প্রকৃত কমরেড রবি দাস। তাই তো একুশে বামেদের ব্রিগেড সমাবেশেও হালিশহর থেকে কলকাতায় এভাবেই এসেছিলেন। ব্রিগেডের দু’দিন আগেই ময়দানে পৌঁছেছিলেন। একমাস আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সমাবেশেও ওই একইভাবে পৌঁছে যান হালিশহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবি দাস। এমনকী আগে নয়াদিল্লির কৃষক সভায়ও যোগ দিতে গিয়েছিলেন। এবার এলেন প্রিয় নেতাকে দেখতে হাসপাতালে। রবি দাসের কথায়, ‘আগে সিঙ্গুর, ব্রিগেডে আমি বুদ্ধবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি। হাসপাতালে ভর্তির খবর পেয়েই রওনা হয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে আসতে তো সময় লাগেই।’
আরও পড়ুন: ‘সোমবার থেকেই হাট চালু করে দেব’, মঙ্গলাহাটে গিয়ে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস ফিরহাদের
আর কী জানালেন রবি দাস? হালিশহর থেকে কলকাতায় আসার পথে তাঁকে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। তবু লক্ষ্য অবিচল রেখে পৌঁছেছেন আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতালে। পথে এত ঝামেলাকে সহ্য করে নিয়েছেন প্রিয় নেতার কাছে আসার জন্য। তবু মাথানত করেননি। কমরেড রবি দাসের কথায়, ‘কয়েকজন টাকা পয়সা ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছে। সাইকেলের হাওয়া খুলে দিয়েছে। এমনকী ভেঙেও দিয়েছে একটা অংশ। কিন্তু তারপরও আমি চাই উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’ রবি দাস এত কষ্ট পেয়েও সেটাকে কষ্ট বলে মনে করেননি। ঘামে, ক্লান্তিতে রাতে তিনি ঝিমিয়ে পড়লেও শেষে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলেন, ‘এই লড়াই জিততেই হবে কমরেড’।