আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার রেশ এখনও কেউ ভুলতে পারেননি। ওখানে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল। যার জেরে তুমুল আন্দোলন হয়েছিল রাজ্য জুড়ে। সদ্য উঠেছে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি। আর এই আবহের মধ্যেই খাস কলকাতার হরিদেবপুরের স্কুল ও হস্টেলে চার নাবালিকা ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এখানের লেডিস হস্টেলের সমস্ত কর্মীরাই মহিলা। তবে সম্প্রতি ওই হস্টেলের মহিলা ওয়ার্ডেন বিয়ে করেন। তারপর তাঁর স্বামী এই হস্টেলে আসতে শুরু করেন। সেটা হস্টেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ।
এই ওয়ার্ডেনের স্বামী এখানে আনাগোনার মধ্যে দিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে চিহ্নিত করেন বলে অভিযোগ। এমনকী ওই পছন্দ করা ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের হৃদয় জয় করেন। বিশ্বাস অর্জন করেন। আর সেই সুযোগে একের পর এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর কাউকে যেন কিছু বলা না হয় সেই ফরমানও দেন ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি। এসব কাউকে জানালে যে ফল ভাল হবে না সেই হুমকিও দেওয়া হয় ছাত্রীদের। কিন্তু অবশেষে তা প্রকাশ্যে চলেই এল। গোটা ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: সবজির লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে নয়া নীতি নবান্নর, কৃষকদের দুয়ারে এবার রাজ্য সরকার
যৌন হেনস্থা হওয়ার পর থেকেই ছাত্রীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকত। এই বিষয়টি ছাত্রীদের কথাবার্তায় মুখে–চোখে ধরা পড়তে থাকে। তখন অভিভাবকরা এমন অদ্ভূত আচরণ দেখে ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। প্রথমে তারা ভয়ে কিছু বলতে চাইছিল না। পরে ছাত্রীদের অভিযোগ, কিছুদিন আগে ওয়ার্ডেনের স্বামী প্রথমে এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহ করেন। পরে আরও তিন ছাত্রীকে একইভাবে যৌন নিগ্রহ করেন। তাতেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত ছাত্রীরা। প্রত্যেক রবিবার অভিভাবকরা ছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এই রবিবার যখন অভিভাবকরা ছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন, তখনই ছাত্রীরা তাদের অভিভাবকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে পুরো বিষয়টি জানিয়ে দেয়।
তখনই শোরগোল পড়ে যায়। তারপর সন্ধ্যায় অন্যান্য অভিভাবকরাও হস্টেলের সামনে এসে জড়ো হন। আর চিৎকার জুড়ে দেন। নিজেদের সন্তানকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাপক চাপ দিতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাঁরা হরিদেবপুর থানায় গিয়ে গোটা ঘটনাটি জানান। আর অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মহিলা ওয়ার্ডেন ও তাঁর স্বামী এবং আর একজন শিক্ষককে হরিদেবপুর থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। একইসঙ্গে চার অভিযোগকারী ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা। ছাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।