গত লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটের নামকরণ (INDIA) করেছিলেন তিনি। আর, এবার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ডাকেই বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)-এর মঞ্চে নজর কাড়লেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা INDIA-এর অন্যতম শরিক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-এর কার্যনির্বাহী সভাপতি হেমন্ত সোরেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্য়া, একদিকে যখন জাতীয়স্তরে INDIA-এর মধ্যে ডামাডোল ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে বাংলার মঞ্চে দুই INDIA শরিক (তৃণমূল কংগ্রেস ও জেএমএম)-এর সর্বোচ্চ নেতা-নেত্রীর সহাবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও এই মঞ্চ খাতায়-কলমে শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক, তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের পাশে হেমন্ত সোরেনের উপস্থিতি সারা দেশের রাজনৈতিক মহলের নজর কাড়বে।
তথ্য বলছে, এই অনুষ্ঠানের জন্য অনেক আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই মঞ্চে সস্ত্রীক হাজির ছিলেন হেমন্ত। বিজিবিএস-এর উদ্বোধনী মঞ্চে সোরেন দম্পতির সঙ্গে মমতাকে আন্তরিকভাবে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে।
পরবর্তীতে অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে হেমন্ত সোরেন যখন ভাষণ দেন, তাঁর গলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায়। এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে হেমন্ত উল্লেখ করেন, বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের মধ্য়ে অনেক মিল রয়েছে। তাই এই দুই রাজ্য যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে তা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নের সহায়ক হবে। সোজা কথায়, মমতা সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার বার্তা দেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে, মমতাও তাঁর ভাষণে হেমন্তের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দেন। উল্লেখ করেন, বাংলায় আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে রাজ্য সরকার ঢেলে উন্নয়নের কাজ করছে। প্রসঙ্গত, ঝাড়খণ্ডও আদিবাসী অধ্যুষিত একটি রাজ্য।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা পরম্পরা লক্ষ করলে দেখা যাবে, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের মধ্য়ে একটি মজবুত ও দৃঢ় সমঝোতা বা বোঝাপড়ার থাকার বার্তা দিয়ে চলেছেন দুই রাজ্যেরই প্রশাসনিক প্রধান।
কয়েক মাস আগে যখন হেমন্তকে গ্রেফতার করেন ইডি, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ান মমতা। বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা করার অভিযোগ তুলে সরব হন। পরবর্তীতে হেমন্ত মুক্ত হন এবং ফের নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন। তাঁর সেই শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। আর এবার বাংলার বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে পৌঁছে গেলেন হেমন্ত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, এই সহাবস্থান শুধুমাত্র বিজেপির প্রতি নয়, জাতীয়স্তরে টিম INDIA-এর প্রতিও যথেষ্ট বার্তাবাহী। এখন INDIA-এর বাকি সদস্যদের মধ্যেও আগামী দিনে এই ধরনের বোঝাপড়া দেখা যায় কিনা, সেটাই দেখার।