বঙ্গ–ললনার চৌর্যবৃত্তি তাক লাগিয়ে দিয়েছিল পুলিশ কর্তাদের। মোবাইল ও প্রসাধনী দ্রব্য চুরি দিয়ে তার হাতেখড়ি। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের শপিংমলে লাস্যময়ী চুরি করা শুরু করে। তখন কেউ ভাবতেই পারেনি। পরে লাখ লাখ টাকার গয়না চুরি করে ফাঁকা করে দিয়েছিল দোকান। তবে কলকাতায় হাত পাকালেও পরবর্তীকালে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে পর পর টাকা ও গয়না চুরি করে। অবশেষে দু’বছর পুলিশকে এড়িয়ে যাওয়ার পর মুম্বইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চ বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করল অর্চনা বড়ুয়া ওরফে মুনমুন হোসেন ওরফে নিক্কিকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের আসল বাড়ি মধ্য কলকাতার তালতলায়। সে ডেরা বেঁধেছিল লেকটাউনেও। ৪৬ বছরের ওই মহিলা পেশায় পানশালার গায়িকা হলেও টাকা ও গয়নার ব্যাগ চুরিতে মহাবিদ্যা অর্জন করেছিল। চুরির জন্য এক শহর থেকে অন্য শহরে বিমানে করে যাতায়াত করত সে! শপিং মল, বড় হোটেল, ধনী ব্যক্তিদের বিয়েবাড়ি ছিল তার টার্গেট। কলকাতা পুলিশের কাছেই তিনটি মামলা ছিল।
জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মুম্বইয়ের এনএম যোশী মার্গ থানায় এক গৃহবধূ অভিযোগ করেন, তিনি একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ব্যাঙ্কের লকার থেকে গয়না বের করে ব্যাগে রাখেন। গয়না ভরতি ব্যাগটি নিয়ে লোয়ার পারেল এলাকার একটি শপিং মলে গিয়ে কিছু জিনিসপত্র কেনেন। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে। পাশে ব্যাগটি রেখে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎই দেখেন ১৫ লাখ টাকার গয়না–সহ ব্যাগটি উধাও। মুম্বইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ইউনিট ফাইভের গোয়েন্দা আধিকারিকরা তদন্তে নামেন। খতিয়ে দেখা হয় সিসিটিভির ফুটেজ। সেখানে ওই মহিলাকে মুম্বইয়ের গোয়েন্দারা শনাক্ত করেন। দেখেন, ২০১৮ সালে ওই একই মহিলা দাদার ও লোয়ার পারেলের অন্য দুটি শপিংমলে একই পদ্ধতিতে গয়নার ব্যাগ চুরি করেছে। এবার বেঙ্গালুরুর একটি ফ্ল্যাট থেকে মহিলাকে মুম্বইয়ের গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেন।
ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে চুরির সমস্ত গয়না, কিছু টাকা, মোবাইল ফোন ও চুরি যাওয়া নথি। ওই মহিলাকে গ্রেফতারের খবর এসে পৌঁছায় লালবাজারেও। লালবাজারের গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানান, ২০০৫ সাল নাগাদ ভবানীপুরের এলগিন রোডের একটি শপিং মলে কিছু জিনিস চুরি যায়। তখন লালবাজারের গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করে সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে ওই মহিলার ফুটেজ পান।
কলকাতার তালতলা থানার অদূরেই সে থাকত। সেখানে একটি পুরনো বাড়িতে দু’কামরার ঘরে মা–ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকত সে। সেই বাড়িতে হানা দিয়ে উদ্ধার হয় চোরাই জিনিসগুলি। পরে জামিন পাওয়ার পর অর্চনা চলে যায় মুম্বই। সেখানে পানশালায় গায়িকার কাজ নেয়। কিন্তু চুরির অভ্যাস ছাড়তে পারেনি। পানশালা সূত্র ধরেই মুম্বইবাসী এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে। তার নতুন নাম হয় মুনমুন হোসেন। ফের কলকাতায় এসে শপিংমলে ঘুরে বড় দাও মারে সে। তখন চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ তালতলায় গেলেও তার হদিশ মেলেনি।
গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, অর্চনা বা মুনমুন মুম্বইয়ের পানশালায় বহুল পরিচিত নিক্কি নামেই। কলকাতায় পর পর গ্রেফতার হওয়ার কারণে অর্চনার এদিকে আর পা বাড়ায়নি। এবার সে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদে পর পর চুরি করতে শুরু করে। পুলিশ কর্তারা এক বাক্যে স্বীকার করছেন, ‘একই অঙ্গে এত রূপ–গুণ দেখিনি তো আগে।’