কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলায় পা রাখতেই বঙ্গ–বিজেপির নেতারা ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছিলেন। সেখানে দুটি বিষয় রাখা হয়েছিল। এক, রাজ্য নেতৃত্বের উপর আস্থা দেখাতে। দুই, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে ফেলতে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ। এখানে প্রথম বিষয়টি সামান্য মান্যতা পেলেও দ্বিতীয় বিষয়টি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। উলটে আত্মনির্ভরতা বাড়াবার বার্তা দিয়েছেন তিনি। আর তাতে রাজ্য নেতৃত্ব কার্যত হতাশ। শাহের এই ১৮০ ডিগ্রি ভোলবদল নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়েছে।
ঠিক কী বার্তা দিয়েছেন শাহ? বঙ্গ বিজেপির নেতাদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাফ জানান, ৩৫৬ ধারা জারি কিংবা সিবিআই সরকার গড়ে দেবে না। বরং একমাত্র দাওয়াই—‘মমতা মডেল’। সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক হাল যে অত্যন্ত বেহাল, শুক্রবার রাজারহাটের হোটেলে দলীয় বৈঠকে সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। এমনকী রাজ্য সভাপতিকে কার্যত ৬ মাসের চরম সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি।
এই ৬ মাসের মধ্যে সুকান্ত মজুমদারকে যেমন সংগঠন মজবুত করে প্রমাণ দিতে হবে তেমনি শুভেন্দু অধিকারীকে প্রমাণ দিতে হবে লড়াই–আন্দোলন করে এগোনোর। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে অমিত শাহ তাঁদের বলেন, ‘সংঘর্ষ করুন। ভাববেন না মোদী আপনাদের সরকারে বসিয়ে দেবে। মমতা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়াই করেছেন। সিপিআইএমকে উপড়ে ফেলে ক্ষমতায় এসেছেন। একটা সময় লোকসভায় উনি ছিলেন দলের একমাত্র প্রতিনিধি। সেখান থেকে এই উচ্চতায় পৌঁছেছেন। তাই মমতাকে অনুসরণ করে রাস্তায় নেমে লড়াই–সংগ্রাম করুন।’
যে মুখ্যমন্ত্রীকে সারাদিন সুকান্ত–শুভেন্দু–দিলীপ ঘোষরা গাল দিয়ে যান তাঁর লড়াইকেই স্বীকৃতি দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর তাতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন বঙ্গ–বিজেপির প্রথমসারির নেতারা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই–সংগ্রাম অমিত শাহের মুখে শুনে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছিলেন। এমনকী নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে কথাও বলেছেন। সেখানে অন্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার আর একটি রাজ্যে সরকার তৈরি করে দেবে না। নিজেদের তৈরি হতে হবে। আর আনুষঙ্গিক সাহায্য শীর্ষ নেতৃত্ব করবে। জায়গাটা নিজেদেরই তৈরি করতে হবে।’
এখানে ৩৫৬ নিয়ে সুকান্ত–শুভেন্দুরা বলতে গিয়েছিলেন অমিত শাহকে। সেখানে পরিষ্কার তিনি জানিয়ে দেন, ‘বাবরি কাণ্ডের পর কংগ্রেস চারটি রাজ্যে সরকার ফেলে দিয়েছিল। তার পরিণতি কী হয়েছে সবাই জানে। এখানে তো কিছুই হয় না। লালুর শাসনকালে এক ঘণ্টায় ২৮ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আমি নিজে একমাস জেল খেটেছি। ৫৬টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে আমার নামে, যার মধ্যে ছ’টি মার্ডার কেস। আপনাদের কতজনের নামে মার্ডার কেস রয়েছে?’ আর কথা বাড়ায়নি রাজ্য নেতারা। এখন আত্মনির্ভরতা এবং আন্দোলন করার নির্দেশ কতটা পালন হয় সেটাই দেখার।