দীর্ঘদিন ধরে আবেদন-নিবেদন করেও যে কাজ হয়নি, সেই কাজই হল মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে! কলকাতা হাইকোর্ট কড়া দাওয়াই দিতেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক নেতা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল হাওড়া সদর থানার পুলিশ! একইসঙ্গে, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সিরাজুলের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তেরও নির্দেশ দিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের বিশ্লেষণ, এই ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হল তৃণমূল শিবিরকে। কারণ, কিছু দিন আগে এই সিরাজুল ইসলামকেই হাওড়া জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের মাধ্যমিক শিক্ষা সেলের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়। যা নিয়ে ইতিমধ্যে কম আলোড়ন হয়নি। কারণ, ২০০১ সালে এই সিরাজুলের চাকরি গিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টেরই নির্দেশে। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। আবার, এই সিরাজুলের নাম জড়িয়ে পড়ে নিয়োগ কেলেঙ্কারিতেও।
অভিযোগ, এত কাণ্ডের পরও সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য প্রশাসন। এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ একটি অভিযোগ পর্যন্ত গ্রহণ করেনি পুলিশ!
বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সোমা রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থী। সেই মামলার শুনানিতে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ বিচারপতি বসু। ভরা এজলাসেই পুলিশকে ভর্ৎসনা করেন তিনি। জানতে চান, কেন ওই তৃণমূল শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে এই বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। আর, বিচারপতির কাছে এই ধমক খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এফআইআর করে হাওড়া পুলিশ।
এর পাশাপাশি, একাধিক গুরুতর অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে, তাঁকে কীভাবে একটি রাজনৈতিক দলের শিক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হল, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৮ মার্চ। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ওই দিন সিআইডি-কে আদালতে জানাতে হবে, তাদের তদন্ত কত দূর পর্যন্ত এগোল।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের কর্ম শিক্ষা ও শারীর শিক্ষা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলায় বিচারপতি বসুই নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে। এবং রাজ্যের সমস্ত বেআইনি শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত সেই কমিটিকে দিয়ে করাতে হবে। সেই কমিটির তদন্তের মাধ্যমেই সিরাজুলের নাম সামনে আসে।
অভিযোগ, এরপরও সিরাজুলের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, কারণ তিনি রাজ্যের শাসকদলের একজন প্রভাবশালী নেতা! হাইকোর্ট অবিলম্বে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সিআইডি-কে।