কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে জট অব্যাহত। এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে আপাতত মেডিক্যালের জট কাটার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। একদিকে পড়ুয়ারা যেমন নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন, তেমনি নবান্নও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। ফলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাই নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি এই অচলাবস্থা কবে কাটবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।একইসঙ্গে, নির্বাচনের দায়িত্ব কার? নির্বাচনের নির্দিষ্ট দিনই বা কারা ঘোষণা করবে? তার উত্তর এখনও প্রশাসনের কাছ থেকে মেলেনি।
কী দাবিতে পড়ুয়াদের আন্দোলন?
বিক্ষোভকারীদের দাবি, শেষবার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৬ সালে। এর পরে আর ছাত্র নির্বাচন হয়নি। তবে আগামী ২২ ডিসেম্বর প্রথমে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছিল। তার আগে নির্বাচন সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে যোগ দেন পড়ুয়ারা। কিন্তু তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয় এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তা অন্যান্য পড়ুয়াদেরও জানিয়ে দিতে বলা হয়।
কবে থেকে শুরু হয়েছে আন্দোলন?
মেডিক্যালের পড়ুয়াদের আন্দোলন শুরু হয়েছে গত ৫ ডিসেম্বর সোমবার থেকে। কোনও কারণ ছাড়ায় নির্বাচন না করার কথা জানানোর পরেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে পরিস্থিতি। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভ-ঘেরাও শুরু করেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। ঘেরাওয়ে আটকে পড়েন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, বিভাগীয় প্রধান-সহ ২১ জন কর্মকর্তা। ফলে ব্যাপক সমস্যায় পড়েন রোগীরা। সেন্ট্রাল ল্যাব খুললেও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় রোগীর পরিজনদের।অবশেষে বুধবার মধ্যরাতে প্রায় ৩৪ ঘণ্টা পর ঘেরাওমুক্ত হন আধিকারিকরা। এদিকে, চিকিৎসা পরিষেবা ব্যহত নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট একটি মামলাও দায়ের হয়। বর্তমানে মামলাটি চলছে।
অনশন শুরু পড়ুয়াদের
বুধবার রাতে আধিকারিকদের ঘেরা মুক্ত করে দেওয়ার পর পড়ুয়ারা বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় ৫ জন ছাত্র মিলে অনির্দিষ্টকালের অনশন শুরু করেন। পরের দিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন জানান। তবে পড়ুয়ারা নিজেদের দাবিতেই অনড় থাকেন। এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের অনুরোধ কাজ হয়নি। এদিকে, গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পড়ুয়াদের আশা ছিল, সেই বৈঠকে হয়তো সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে। কিন্তু, শেষমেশ বৈঠক হয়নি। ফলে জট অব্যাহত থাকে মেডিক্যালে। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে প্রতীকী অনশন করেন অভিভাবকরা। পাশাপাশি নির্বাচনের দাবিতে মিছিল করেন পড়ুয়ারা। যোগ দেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী, আলিয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।
কী বক্তব্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ভবনের?
স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। কলকাতা মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, ছাত্রদের দাবি নিয়ে তিনি স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সমস্ত কিছু কলেজ কাউন্সিলের হাতে নেই। সিদ্ধান্ত উপরমহল থেকে আসবে। আশা রাখছি, সুরাহা হবে।’ তাঁর দাবি, নির্বাচন হবে না, এমনটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলেননি। যদিও পড়ুয়াদের দাবি, নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। ফলে কবে তা ঘোষণা হবে? তাই নিয়ে থাকছে প্রশ্ন।