একটা সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্য ছিলেন। এমনই জানালেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসে তিনি জানান যে ছেলেবেলায় আরএসএসের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে যখন বিচারব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠেন, তখন আরএসএস ছেড়ে দেন। বিচারব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়ে ওঠার পর থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যক্তিকে একই চোখে দেখতেন। কেউ বাম সমর্থক বলে তাঁকে আলাদা চোখে দেখেননি। কেউ তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক বলে তাঁর ক্ষেত্রে আলাদা কোনও পদক্ষেপ করেননি। আলাদা চোখে দেখেননি কোনও বিজেপি বা কংগ্রেস সমর্থককে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাঁর কাছে বিচারব্যবস্থা ছিল বলে জানান বিচারপতি দাশ। তিনি জানান, জীবনে কখনও কোনও ভুল কাজ করেননি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসে সাহসের সঙ্গে বলছেন যে তিনি আরআরএসের সদস্য ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিসত্তা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে আরআরএসের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, সেটাও জানান বিচারপতি দাশ।
বিচারপতি দাশ কী বলেছেন?
বিচারপতি দাশ বলেছেন যে ‘আজ অবশ্যই আমি নিজের ব্যক্তিসত্তার কথা বলতে চাইছি। আমি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত সেখানে ছিলাম আমি। সাহসী, ন্যায়পরায়ণ, অন্যদের সমান চোখে দেখা, সর্বোপরি দেশপ্রেম এবং যেখানেই কাজ করি না কেন, সেখানে নিজের সবটা উজাড় করে দেওয়ার বিষয়টি শিখেছিলাম। আমার অবশ্যই এখানে স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্য ছিলাম।’
তিনি জানিয়েছেন যে ৩৭ বছর আগে আরএসএসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। নিজের কেরিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কখনও সেই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেননি। আর কাউকে আলাদা চোখে দেখেননি। তাঁর কথায়, 'আপনারা নিশ্চিতভাবে দেখেছেন যে কোনও ব্যক্তির হয়ে পক্ষপাতিত্ব করেননি। কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ বা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করেননি।'
RSS ডাকলে যাব, বললেন বিচারপতি দাশ
বিচারপতি দাশ জানান, কোনও সাহায্যের জন্য যদি এখন তাঁকে ডাকে আরএসএস, তাহলে সেখানে ফিরে যাবেন। তাঁকে যদি কোনও কাজ দেওয়া হয়, সেটাও করবেন। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যেহেতু আমার জীবনে কোনও ভুল কাজ করিনি, তাই আমার এটা বলার সাহস আছে যে আমি ওই প্রতিষ্ঠানের অংশ। কারণ সেটাও ভুল নয়।’
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee on RSS: 'আগে ভাবতাম আরএসএস মানে…এখন ভোগ করতে করতে…,' আর কী বললেন মমতা?
বিচারপতি দাশের ইতিবৃত্ত
১৯৮৫ সালে কটকের মধুসূদন ল' কলেজ থেকে আইন নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন বিচারপতি দাশ। নন-কলেজিয়েট পড়ুয়া হিসেবে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের অক্টোবর ওড়িশা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ২০২২ সালের জুনে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।