নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যখন জামিনের জন্য মরিয়া লড়াই করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তখন উলটে তাঁর বিপদ আরও বাড়ল। পার্থর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে আদালতে আবেদন করলেন তাঁরই জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্য। ইতিমধ্যে সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে কলকাতার বিশেষ PMLA আদালত। একই সঙ্গে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কল্যাণময়। সেই আবেদনও বিবেচনা করছে আদালত।
আরও পড়ুন - ‘দলের থেকে জাত আগে’ বলতেই হুমায়ুন কবিরকে শো-কজ করল তৃণমূল
পড়তে থাকুন - দুধেল গাইয়ের দুধ খাচ্ছেন মমতা আর লাথি খাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা: সুকান্ত
জানা গিয়েছে চলতি সপ্তাহেই ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ PMLA আদালতে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজসাক্ষী হতে চেয়ে আবেদন করেন কল্যাণময়। একই সঙ্গে চার্জশিটে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলি ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন করেন তিনি। রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করে কল্যাণময়কে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে বলেন বিচারক। সঙ্গে তিনি বলেন, কল্যাণময় সব সত্যি কথা বললে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ ক্ষমা করার ব্যাপারে বিবেচনা করবে আদালত। শ্বশুরের বিরুদ্ধে জামাই রাজসাক্ষী হওয়ায় পার্থর বাকি জীবনটা জেলেই কাটতে চলেছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
আরও পড়ুন - কারাবাসের বর্ষপূর্তিতে ইডির সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খেল সন্দেশখালির শাহাজাহান
বলে রাখি, ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই প্রয়াত হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী বাবলি চট্টোপাধ্যায়। এর পর তাঁর নামে একটি ট্রাস্ট তৈরি করেন পার্থ। সেই ট্রাস্টের কর্ণধার ছিলেন তাঁর একমাত্র মেয়ে সোহিনী ভট্টাচার্য। সেই ট্রাস্টের অধীনে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে জমি লিজ় নিয়ে বাবলি চট্টোপাধ্যায় মেমোরিয়াল স্কুল নামে একটি স্কুল তৈরি করেন কল্যাণময়। তবে সেই স্কুলের দেখভাল করতেন কল্যাণময়ের মামা কৃষ্ণচন্দ্র অধিকারী। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৬ বিঘা জমি লিজ় নিয়ে জামাই স্কুল বানিয়েছিল। তবে সেই স্কুলের নাম কেন শাশুড়ির নামে দিয়েছিল তা আমি জানি না। ভাগ্নে স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে থাকে। স্কুলের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গিয়েছিল।’ ওই স্কুলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ২ বার এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ার পর সিবিআই ও ইডির তলবে বিদেশ থেকে এসে একাধিকবার হাজিরা দিয়েছেন কল্যাণময়। ইডিকে কল্যাণময় জানিয়েছেন, বাবলি চট্টোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে যে কালো টাকা সাদা হত তা জানতেন তিনি। সেজন্য প্রথমে কোনও ব্যক্তিকে নগদে টাকা দেওয়া হত। তার পর সেই ব্যক্তি ওই টাকা ট্রাস্টকে অনুদান হিসাবে চেক অথবা ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পাঠাতেন। এভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে বলে দাবি করেন কল্যাণময়। তবে এই টাকা তাঁর নয় বলেও ইডিকে জানান তিনি। প্রাথমিক দুর্নীতি চার্জশিটে কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ এনেছে ইডি। এবার দেখার রাজসাক্ষী হয়ে সেই সব অভিযোগ থেকে খালাস পান কি না পার্থর জামাই।