মেয়ের বায়নায় বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। অনেক রীতিনীতি পালনের মধ্যে দিয়েই গুটি-গুটি পায়ে পুজোটা এগিয়ে যাচ্ছিল। এবার তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করার কথা ছিল পুজোর। এবারও পুজোর প্রাথমিক প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছিল। প্রতিমা তৈরির বায়না দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। বায়না দেওয়া হয়েছিল ঢাকিকেও। কিন্তু ৮ অগস্টের অভিশপ্ত রাত সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। ওলট-পালট করে দিয়েছে সবকিছু। তারপর থেকে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে সেই পুরনো দিনের কথাগুলো। পুজোর সময় যখন অনেক জায়গায় আলো জ্বলছে, তখন সেই আলোর রশ্মি তাঁদের বুকে যেন তীরের মতো বিঁধে মনে করিয়ে দিচ্ছে যে মেয়ের বায়নাতেই আগের দুটো বছর পুজোর পাঁচটা দিন তাঁদের বাড়িও আনন্দে মেতে থাকত। আর সেই কথার রেশ ধরেই সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা জানান, দুর্গাপুজোয় অঞ্জলি দিতে বসার পরে যদি কোনও রোগীর ডাক আসত, তখনও উঠে যেতেন মেয়ে। বলতেন যে ‘মানুষের উপরে তো পুজো নয়, বলো মা।'
বাড়িতে এসে কেঁদে ফেলেছিলেন ঢাকি
শুধু পরিবার নয়, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাড়ির পুজোর সঙ্গে যাঁরা-যাঁরা যুক্ত ছিলেন, ৮ অগস্টের পর থেকে তাঁদের সকলের জীবনই ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। যে ঢাকিকে বায়না দেওয়া ছিল, তিনিও বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার মা।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, বাড়ির দুর্গাপুজোর জন্য যে ঢাকিকে বায়না দেওয়া হয়েছিল, তিনি রামপুরহাট থেকে এসে টাকা ফেরত দিয়ে যান। তাঁর হাতের জাদুতে যে বাড়িটা গমগম করার কথা ছিল, সেই বাড়িটারই এরকম অবস্থা দেখে নিজের চোখের জল সামলাতে পারেননি। কেঁদে ফেলেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনও ভাষা ছিল না বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার মা।
মেয়ের বায়নায় পুজো শুরু হয়েছিল বাড়িতে
সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সত্যিই কোনও ভাষা থাকার নয় নির্যাতিতার পরিবারের। কীভাবে থাকবে? এই পুজোটা তো শুরু হয়েছিল মেয়ের জন্যই। মেয়ে একদিন বায়না করেছিলেন। দুর্গাপুজোয় এত রীতিনীতি, ভোগ রান্নার বিষয় থাকে যে একাহাতে সে সব সামলানো খুব কঠিন বলে প্রথমে রাজি হননি বলে জানান নির্যাতিতার মা। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার মা জানান, মেয়ে বলেছিলেন যে মা'কে একা কিছু করতে হবে না। মায়ের সঙ্গে সব কাজে হাত লাগাবেন। দু'জনে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন।
একেবারে গুছিয়ে পুজোর জোগাড় করতেন তরুণী
আর কোনওদিন মুখ ফুটে কিছু না চাওয়া মেয়ের বায়না ফেরাতে পারেননি মা। বাড়িতেই শুরু করা হয়েছিল দুর্গাপুজো। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন যে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দেবী দুর্গার শাড়ি কিনতেন মেয়ে। খুব ভালো পুজোরও জোগাড় করতেন। যিনি পুজো করতেন, সেই পুরোহিতের তো মেয়েকে ছাড়াই চলত না। মেয়ে সবকিছু এমন গুছিয়ে কাজ করতেন যে পুজোর দিকে কোনও মাথাই দিতে হত না বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার মা।