তন্ময় চট্টোপাধ্যায়
পুরনির্বাচনে CAA বিরোধী প্রচারকে ভোঁতা করতে মরিচঝাঁপি গণহত্যাকে হাতিয়ার করতে চলেছে বিজেপি। এই নিয়ে ইতিমধ্যে গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ১৯৭৯ সালের ৩১ জানুয়ারি ঠিক কী ঘটেছিল তা পরতে পরতে তুলে ধরতে চায় বিজেপি।
বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, ‘মরিচঝাঁপি বাংলার ইতিহাসের সব থেকে কলঙ্কিত অধ্যা। আমরা ৩১ জানুয়ারি মরিচঝাঁপি দিবস পালন করেছি। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চায় বিজেপি। বাঙালি হিন্দুদের ওপর বামপন্থী সরকারের নির্মম অত্যাচারের কথা তুলে ধরে আমরা মানুষকে বোঝাতে চাই, এদের জন্যই আনা হয়েছে CAA.’
নথি ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে মরিচঝাঁপি গণহত্যার আগে ২৪ জানুয়ারি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী জনতা দলের মোরারজি দেশাইকে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। লেখেন, জনতা দলের ২ জন বিধায়ক ও এক সাংসদ উদ্বাস্তুদের সাহায্য করছেন। পরে জানা যায় এদের মধ্যে একজন জনতা দলের নেতা হরিপদ ভারতী।
জবাবে মোরারজি দেশাই লেখেন, আপনার যা ভাল মনে হয় করুন। সঙ্গে আছি। আমাকে এই নিয়ে আর কেউ কিছু জানায়নি। কেউ কিছু বললে আমি আমার জবাব দিয়ে দেব। এই জবাব মহাকরণে পৌঁছনোর পরের দিনই ঘটে মরিচঝাঁপি গণহত্যা।
গোপাল মণ্ডল নামে মরিচঝাঁপি গণহত্যার এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ‘ঘটনার অন্তত ৩ মাস আগে কুমিরমারিতে ক্যাম্প করে পুলিশ। মরিচঝাঁপিতে কোনও জিনিস পাওয়া যেত না। খাবার ও পোশাক কিনতে নদী পার করে কুমিরমারিতে যেতে হত। ৩১ জানুয়ারি ১৯৭৯-এর সকাল থেকে ঘাটের সমস্ত মোটরবোটের দখল নেয় পুলিশ। তার পরও মরিচঝাঁপি থেকে মানুষ খাবার কিনতে নদী পার করার চেষ্টা করলে গুলি চালায় তারা।‘ তাঁর দাবি, সকাল ১০.৩০ মিনিটে প্রথম গুলির আওয়াজ পান তিনি। তার পর থেকে প্রতি ১০ – ১৫ মিনিট অন্তর গুলি চলার আওয়াজ পেয়েছেন। ২ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলছিল। গুলি বন্ধ হলে আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখি অন্তত ৩০ জায়গায় তখনও টাটকা রক্তের দাগ। তবে কোনও দেহ দেখতে পাইনি আমরা।
মরিচঝাঁপি গণহত্যায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিস্তর মতবিরোধ রয়েছে। কয়েক শ’ থেকে শুরু করে হাজার খানেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে। অভিযোগ, দণ্ডকারণ্যে প্রবাসী বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের সেখান থেকে ডেকে এনেছিলেন বাম সরকারেরই মন্ত্রী রাম চট্টোপাধ্যায়। পরে তাদের গুলি করে মারে সেই বাম সরকারই। মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ নমঃসূদ্র সম্প্রদায়ের ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘মানুষ জানে বামেরা উদ্বাস্তুদের জন্য কী করেছে। বিজেপি মিথ্যে দিয়ে পুরনো ঘা খুঁচিয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। লাভ হবে না।’
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলিতদের কী অবস্থা সবাই জানে। তাই এসব করে লাভ হবে না।’