পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মেধাতালিকায় নাম থাকার সত্ত্বেও চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ না-করায়, স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)’দ্বারস্থ হয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু কোনও কারণ না-দেখিয়ে মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল স্যাট।স্যাটের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার স্যটের সেই নির্দেশকে খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
কেন মেধাতালিকায় নাম থাকার সত্ত্বেও মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল স্যাট, তার উপযুক্ত কারণ দর্শানোর পাশাপাশি আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্যাটকে এই মামলার নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যদি এর মধ্যে তারা কোনও নিয়োগ করে, তাহলে সেই নিয়োগপত্রে লিখে দিতে হবে যে, মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মামলার চূড়ান্ত রায়ের উপরেই চাকরিজীবীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। এদিন এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৌমেন্দ্র সেন ও বিচারপতি হিরণময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী জানান, শূন্যপদ থাকার সত্বেও আবেদনকারীদের নিয়োগ করেনি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল। তাছাড়া কেন এই নিয়োগ দেওয়া হল না, তারও কোনও উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পাবলিক সার্ভিস কমিশন। তার সত্বেও মামলাকারীদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল। যা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে দাবি করেন মামলাকারীদের আইনজীবী।
অন্য দিকে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তরফের আইনজীবী প্রদীপকুমার রায় এর পাল্টা সওয়াল করে জানান, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্য প্রার্থী না-থাকার কারণেই নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। সরকারি আইনজীবী জানান, বিষয়টি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই পিএসসিকেই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। এরপর উভয় পক্ষের বক্তব্য খতিয়ে দেখে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে জুনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পদে মোট ১৩৭৮টি শূন্য পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের তরফে মোট ১০৮২ জনকে নিয়োগ করা হলেও মেধাতালিকায় নাম থাকা আরও ২৭৬ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। যদিও পরবর্তী ক্ষেত্রে আরও ১০২টি শূন্য পদের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, নিয়োগ হওয়া ১০৮২ জন চাকরি প্রাপকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সেই চাকরি নেননি।
এর পরেই মামলাকারী কৌশিক চট্টোপাধ্যায়-সহ মোট ৫৮ জন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের আবেদন জানান। অথচ ২০২৯ সালের জানুয়ারিতে তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে ৫৫ জনকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়। এই ঘটনার পরই সে বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু কোনও কারণ না-দেখিয়েই সেই মামলাটি খারিজ করে দেয় স্যাট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চাকরিপ্রার্থীরা।