কলকাতা মহানগরী। এ শহরের মানবিক মুখ বার বার দেখেছে গোটা বাংলা। আবার এ শহরেই আছে ফুটপাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মৃতদেহ আগলে রাখার মতো ঘটনাও। পথচলতি এত মানুষ, এদিক ওদিক পুলিশের নজরদারি, কার্যত ফিরেও তাকাননি কেউ। অভিযোগ এমনটাই। শহরের ব্য়স্ততম পয়েন্ট রাসবিহারী মোড়ে, হাজরার দিকে যাওয়ার বাসস্ট্যান্ড, তার কাছেই মৃতদেহ আগলে প্রায় ৯ ঘণ্টা সৎকারের অপেক্ষায় থাকলেন স্ত্রী ও মেয়ে। রাত পেরিয়ে সকাল, সকাল পেরিয়ে বেলা, তবুও দেহ সৎকারের ক্ষেত্রে কোনও সহায়তা ওই পরিবার পায়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃতদেহটি গঙ্গা দাস নামে এক ব্যক্তি। তিনি ফুটপাতেই জুতো পালিশের কাজ করতেন। ফুটপাতেই দিনযাপন। তাঁর সঙ্গে থাকতেন পঙ্গু হয়ে যাওয়া স্ত্রী রেণু দাস ও তাঁর মেয়ে। গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন গঙ্গা। অসুস্থতা বেড়ে গেলেও ডাক্তার দেখানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাঁদের ছিল না। এরপর বুধবার রাত ১টা নাগাদ মারা যান তিনি। তারপর থেকেই অনন্ত অপেক্ষা। রাতভর স্বামীর দেহটি কম্বলে মুড়িয়ে কার্যত আগলে বসে ছিলেন স্ত্রী।
এরপর বৃহস্পতিবারের সকাল। ফের ব্যস্ত হতে শুরু করে গোটা শহর। পথচলতি মানুষ কেউ কেউ যাতায়াতের পথে ফিরে তাকিয়েছিলেন। এক ঝলক দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরাও। কিন্তু অভিযোগ, সহায়তার জন্য এগিয়ে আসেননি কেউ। সহনাগরিকের দেহ সৎকারের জন্য পুলিশও যথাযথ সময়ে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ। এরপর বেলা ১১টা নাগাদ কালীঘাট থানার পুলিশ শববাহী গাড়ি নিয়ে এসে দেহটিকে তুলে নিয়ে যায়। গঙ্গা দাসের স্ত্রী রেণু দাস জানিয়েছেন, গভীর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্য়ু হয়। তবে করোনা হয়েছিল কিনা সেব্যাপারে নিশ্চিত নন কেউ। কারণ কোনও পরীক্ষা করানো হয়নি। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ দেহ উদ্ধারের সময়তেও কোনও কোভিড প্রটোকল মানা হয়নি। সেক্ষেত্রেও উঠছে গাফিলতি ও অসতর্কতার অভিযোগ।